• খারাপ রাস্তার কারণে পথেই প্রসব, স্ত্রীর কষ্ট দেখে কাদা-মাটি সরাতে কোদাল হাতে নামলেন স্বামী
    এই সময় | ২৩ মে ২০২৫
  • সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে গিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলেন নারায়ণগড়ের সুব্রত সিং। আর কাউকে যাতে সেই বিপদে পড়তে না হয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কোদাল হাতে মাটি সরাতে পথে নামলেন সুব্রত। বুধবার ভোরে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে গিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। পাকা রাস্তায় কাদামাটিতে বসে যায় গাড়ির চাকা। এমন পরিস্থিতি হয়, আশাকর্মী মানসী পাত্র গাড়িতেই প্রসব করানোর ব্যবস্থা করেন। পথে সন্তানের জন্ম দেন সুব্রতর স্ত্রী সোনালি।

    সুব্রত জানান, বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এখন ভালো আছেন সোনালি ও তাঁর সদ্যোজাত ছেলে। তবে, ঘটনার আকস্মিকতায় বুধবার দুপুর নাগাদ বাড়িতে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আশাকর্মী মানসী পাত্র। বৃহস্পতিবার তিনিও অনেকটাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন।

    এ দিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির কাছেই পাকুরসেনি এলাকার ওই রাস্তা পরিষ্কার করতে কোদাল হাতে নেমে পড়েন সুব্রত। তাঁকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন গ্রামের আরও কয়েক জন। সুব্রত বলেন, ‘রাস্তায় এই ভাবে কাদা জমে আগেও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর বুধবার আমাদের সঙ্গে যা হল, মনে করলেই গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আশা দিদি না থাকলে কী যে হতো! আজ তাই নিজেই রাস্তা পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়েছি।’ ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন নারায়ণগড় ব্লকের বিডিও কৌশিক প্রামাণিকও।

    গ্রামের লোকজনের অভিযোগ, ধান কাটার মেশিন ও ট্রাক্টরের চাকায় উঠে আসা কাদা এ ভাবেই গ্রামীণ রাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্য সড়কে জমতে শুরু করেছে। কাদা জমে গ্রামীণ এলাকার কংক্রিটের পাকা রাস্তাই হয়ে উঠছে কর্দমাক্ত আলপথ। বুধবার কাকভোরে সেই রাস্তাতেই আটকে যায় প্রসূতি-সহ মারুতি গাড়ি। আশাকর্মী মানসী পাত্র ছিলেন বলে বড় বিপদ টলানো গিয়েছে।

    কিন্তু মানসী নিজে স্বীকারও করেন, তাঁর প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ নেই। ওই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এই কাজ করেন তিনি। তিনিই মা ও সদ্যোজাতকে বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তিও করেন।

    বৃহস্পতিবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘এই ঘটনা না ঘটলেই ভালো হতো। কারণ, স্বাস্থ্যদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী আশা দিদিদের প্রসব করানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। তাঁদের দায়িত্ব প্রসূতিদের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র অবধি পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু, নারায়ণগড়ের এই ঘটনার ক্ষেত্রে আমাদের আশা দিদি মানসী পাত্র যা করেছেন, তাতে কোনও প্রশংসাই তাঁর জন্য যথেষ্ট নয়। আমি সব সময়ই বলি আমাদের আশা দিদিরা আমাদের স্বাস্থ্য দপ্তরের গর্ব।’

    কিন্তু এ ভাবে গাড়ির দাপাদাপিতে রাস্তায় কাদা জমছে, প্রশাসন কী ভাবছে? নারায়ণগড় ব্লকের বিডিও কৌশিক প্রামাণিক বুধবারের মতোই বৃহস্পতিবারও বলেন, ‘আমাদের ব্লকে আমরা ৫০০ জন ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছি। যাঁদের ট্রাক্টর, জেসিবি বা হারভেস্টার আছে। দ্রুত একটি বৈঠক ডেকে আমরা তাঁদের শেষ বারের জন্য সতর্ক করব। জমি থেকে রাস্তায় গাড়ি তোলার সময় হয় চাকা পরিষ্কার করে তুলতে হবে কিংবা রাস্তা থেকে কাদা পরিষ্কার করে দিতে হবে। এই নিয়ম না মানলে আমরা তাঁদের গাড়ি আটক করব এবং লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করব।’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, পুলিশ এ বিষয়ে আগেও পদক্ষেপ করেছে। আগামিদিনেও কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

  • Link to this news (এই সময়)