এবার থেকে বিশ্বভারতীর দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ মেমোরিয়াল হাসপাতালে মিলবে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা। সেজন্য এই হাসপাতাল চত্বর ঔষধি বাগানে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ এই হাসপাতালটিকে আয়ুষ হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। এই হাসপাতালে বর্তমানে সপ্তাহে পাঁচদিন সকাল ন’টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে। এবার শীঘ্রই আয়ুর্বেদের চিকিৎসা শুরু হবে। পাশাপাশি যোগ থেরাপি-সহ নানা পরিষেবাও মিলবে। আর সেজন্যই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নতুন করে সেজে উঠছে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ হাসপাতাল।
জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে একদিকে যেমন এই হাসপাতাল চত্বরে জলাশয় ও পুকুর তৈরির কাজ চলছে, ঠিক তেমনি আয়ুর্বেদিক বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তৈরি করা হচ্ছে যোগা পার্কও। কেন্দ্র সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চলছে। এখানে বিনোদন কেন্দ্রের মতোই অভ্যন্তরীণ পরিবেশের তুলনায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য উদ্যানের প্রাধান্য দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে থাকবে ঔষধি গাছও।
এ ব্যাপারে বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ বলেন, ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই আগামী দিনে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রজ মেমোরিয়াল হাসপাতাল নতুন করে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হোমিওপ্যাথি ছাড়াও আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে একটি উন্নতমানের হাসপাতাল তৈরি হতে চলেছে। বিশ্বভারতীর বিনয় ভবনের অধ্যক্ষ সমীরণ মণ্ডল বলেন, নতুন উপাচার্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নতুন রূপ পেতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হাসপাতাল।
জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, ঐতিহ্যবাহী হাসপাতাল ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। উপাচার্যের তৎপরতায় আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়েই হতে চলেছে আয়ুষ হাসপাতাল। রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথি-সহ আয়ুর্বেদ পরিষেবার মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, শান্তিনিকেতন থেকে শ্রীনিকেতন যাওয়ার রাস্তায় চোখে পড়ে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ মেমোরিয়াল হাসপাতাল। আপাতদৃষ্টিতে সেটি দেখে নিছকই গ্রামীণ হাসপাতাল বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এই হাসপাতালের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বিস্তৃত ইতিহাস। এই হাসপাতালের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চার্লস এফ অ্যান্ড্রজ ও মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নানা স্মৃতি। ১৯১২ সালে চার্লস এফ অ্যান্ড্রজের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎ হয়েছিল ইংল্যান্ডে। এরপরই কবির আমন্ত্রণেই শান্তিনিকেতন আসেন অ্যান্ড্রজ। পরে তিনি কবির সঙ্গেই হাত মিলিয়ে গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা পরিষেবার কাজ শুরু করেন। সাধারণ মানুষের সমস্যায় বন্ধুর মতো পাশে থাকতেন তিনি। সেজন্য এলাকাবাসীরা তাঁকে ‘দীনবন্ধু’ আখ্যা দেন। এরপর ১৯৪১ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। তার চার বছর পর ১৯৪৫ সালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এগিয়ে আসেন শান্তিনিকেতনের হাসপাতালের উন্নয়নে। তিনিও এই এলাকায় চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করে হাসপাতাল তৈরির টাকা সংগ্রহ করতে শুরু করেন। ওই সময়ে গান্ধীজি প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। সেই টাকা পুরোটা দিয়ে দেন বিশ্বভারতীকে। শেষ পর্যন্ত সকলের প্রচেষ্টায় ১৯৬২ সালে হাসপাতালের ভবনটি তৈরি হয়। গান্ধীর ইচ্ছে মেনেই হাসপাতালের নাম দেওয়া হয় ‘দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ মেমোরিয়াল হাসপাতাল’। এরপর তহবিলের টাকা দিয়ে চালু হয় হাসপাতালের পরিষেবা।