ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান আচমকা স্থগিত আসানসোলে, কারণ ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর
প্রতিদিন | ২৩ মে ২০২৫
শেখর চন্দ্র, আসানসোল: যতটা গর্জেছে, ততটা বর্ষায়নি। মুখ্যমন্ত্রীর হাজার নির্দেশ সত্ত্বেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে স্থগিত হয়ে গেল ফুটপাত দখলমুক্ত করার হকার উচ্ছেদ অভিযান। কথা ছিল, বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টা নাগাদ বুলডোজার ঢুকবে। কিন্তু ঢুকল আসানসোল পুরনিগমের প্রচার গাড়ি। মাইকে ঘোষণা হল, আজ উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখা হচ্ছে। কিন্তু পুরনিগমের এহেন ঘোষণা ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কে শুরু হল নতুন করে।
আসানসোল পুরনিগম তৃণমূল পরিচালিত। অথচ হকার উচ্ছেদ করে ফুটপাত দখলমুক্ত অভিযান নিয়ে প্রথম থেকেই দলের নেতা, কর্মীরাই দ্বন্দ্ব জড়িয়ে পড়েছিলেন। যার জেরে বিড়ম্বনায় পড়েন মেয়র। এদিন দেখা যায়, একদিকে মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের সমর্থক তো অন্যদিকে মন্ত্রী মলয় ঘটক অনুগামীরা। যাঁরা উচ্ছেদের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের সবার মুখে শোনা গিয়েছে ‘মলয় ঘটক জিন্দাবাদ’ স্লোগান। যদিও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বোরো চেয়ারম্যান রাজেশ তিওয়ারির দাবি, মানুষের রুজি-রুটির কথা ভেবে আপাতত হকার উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে।
এর আগে আসানসোল পুরনিগমের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, হটন রোডে রাস্তার দু’পাশে অবৈধভাবে নির্মিত দোকানগুলি বুধবারের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে। মেয়র হাতজোড় করে দোকানদারদের সরে যেতে অনুরোধ করেছিলেন মঙ্গলবার। হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দোকানদারেরা যদি তা না করেন, তাহলে পুর কর্তৃপক্ষ বুলডোজার নামিয়ে তা উচ্ছেদ করবে। বৃহস্পতিবার দেখা যায়, হটন রোডের দোকানদারদের অনেকেই জিনিসপত্র নিজেরাই সরিয়ে নিয়েছেন। অনেকেই অস্থায়ী ছাউনি বা গুমটি খুলে ফেলেছেন। কিন্তু ওই হটন রোডে ফুটপাত দখল করে রাখা তৃণমূল কংগ্রেসে দলীয় কার্যালয়গুলি একই আছে। জিনিসপত্র সরানো হয়নি। ছাদের অ্যাসবেস্টাসও খোলা হয়নি। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিরোধীরা।
কংগ্রেসের শাহ আলমের দাবি, ”হটন রোড যানজট মুক্ত ফুটপাত দখলমুক্ত অভিযানকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়র শিরদাঁড়া সোজা রাখতে পারলেন না। বিশেষত নেতা-মন্ত্রীদের চাপে পড়ে উচ্ছেদ অভিযানে বন্ধ করে দিলেন। পুনর্বাসন দিয়ে হকার উচ্ছেদের দাবিও তোলা হয়েছিল। সেনিয়েও কিছু বলেননি মেয়র।” তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের আইএনটিটিইউসি নেতা রাজু আলুওয়ালিয়ার দাবি, পুনর্বাসন না দিয়ে হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। যানজট মুক্ত করতে টোটোগুলিকে ট্রান্সফার করা যাবে না অটো স্ট্যান্ডে। বৃহস্পতিবার আসানসোল পুরনিগমে গিয়ে দেখা যায়, মেয়র, ডেপুটি মেয়র, পুর চেয়ারম্যান-সহ অনেকেই অনুপস্থিত। শোনা গেল, তাঁরা কলকাতা গিয়েছেন বিশেষ কারণে।
গোটা বিষয়টি নিয়ে বিজেপির দাবি, শহরকে দখলমুক্ত করতে ব্যর্থ পুর প্রশাসন। আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের অভিযোগ, ওই হটন রোড ফুটপাত যারা দখল করেছেন, তাদের সবথেকে বড় অংশ বিশেষ সম্প্রদায় ভুক্ত। তাই বারবার হকার উচ্ছেদে অভিযান চেষ্টা হলেও স্থগিত হয়ে যায়। তোষামোদির রাজনীতি করছে পুরসভা। অথচ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে যানজটমুক্ত করতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। এখন দেখার, পুর কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশকে কতটা মান্যতা দেয়।