দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া
চুরি না করেও চোরের অপবাদ মাথায় চেপে বসেছিল বছর তেরোর এক কিশোরের। গোটা এলাকায় তার নামে চুরির অপবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই অপমান সইতে না পেরে রবিবার আগাছানাশক খেয়ে নিয়েছিল পাঁশকুড়ার বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ওই কিশোর। অসুস্থ অবস্থায় তমলুক মেডিক্যাল কলেজে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। শত চেষ্টাতেও শেষরক্ষা হলো না, বৃহস্পতিবার মারা গেল ওই কিশোর। তার রেখে যাওয়া সুইসাইড নোটে লেখা থাকল— ‘মা আমি চুরি করিনি’
সপ্তম শ্রেণির ওই পড়ুয়া রবিবার স্থানীয় একটি দোকানে গিয়েছিল। দোকানের সামনে কিছু চিপসের প্যাকেট ঝুলছিল। তারই কয়েকটি দোকানের সামনে পড়ে যায়, বিষয়টি দেখতে পান ওই দোকানের মালিক। ঠিক সেই সময়েই দোকানের এক কর্মচারী তাঁকে একটি কাজে সাহায্য করার জন্য ডাকেন। ফলে চিপসের প্যাকেটগুলি না তুলেই ওই ব্যক্তি দোকানের পিছনে চলে যান। তখন এক বালকের কণ্ঠ শুনতে পান ওই ব্যক্তি, কিছু কেনার জন্য বলছিল সে। ওই দোকান মালিকের দাবি, তিনি এসে দেখতে পান এই কিশোর চিপসের প্যাকেট নিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলে যাচ্ছে। তখন বাইক নিয়ে তার পিছু নেন দোকান মালিক। সেই সময়ে ওই কিশোর তাকে একটি কুড়ি টাকার নোট দেয়। দোকান মালিকের দাবি, তিনি জানিয়েছিলেন পরে দোকানে এসে পাঁচ টাকা নিয়ে যেতে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এরপর ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের কাছে চুরির অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি। ওই কিশোর এবং তার মাকে নিয়ে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি দোকানে এসে পৌঁছন। সেখানে নানারকম অপবাদ দেওয়া হয় কিশোরকে। সেই সময়েই কিশোরকে চড় মারেন তার মা। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, যে ব্যক্তি কিশোরের বাড়ি গিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। তিনিই পরে ওই এলাকায় জনে জনে কিশোরের নামে চুরির অপবাদ ছড়িয়ে দেন। এর পর রবিবারই বাড়িতে রাখা আগাছানাশক খেয়ে নেয় ওই স্কুল পড়ুয়া কিশোর। রবিবারই তাকে তমলুক মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে মৃত্যু হয় তার।
তার বাবার অভিযোগ, ‘দোকান মালিক আমার ছেলেকে চুরির অভিযোগে কানধরে ওঠবস করিয়েছিলেন। সেই অপমানেই ছেলে বিষ খেয়েছিল। আমরা গরীব মানুষ। থানা-পুলিশ কিছুই করব না। বিচারে ভার ভগবানের হাতে ছেড়ে দিলাম।’ ছাত্রের মৃত্যুতে মর্মাহত দোকান মালিক। তাঁর দাবি, ‘আমি দুঃখিত। এখনও বলছি ওকে আমি কোনও শাস্তি দিইনি। দোকানদার হিসেবে যতটুকু বলার বলেছিলাম।’ যার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে, তিনি এলাকা ছাড়া। দোকান মালিকের দাবি, ‘আমার দোকানের সামনে যখন ছাত্রটির মা ওকে চড় মারছিল, তখন ওই ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এর বেশি আমি কিছু জানি না।’ মৃতের পরিবারের তরফে এখনও থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে তমলুক থানার পুলিশ।