বছরে ২৪ শতাংশ সুদের টোপে কোটি কোটি আত্মসাৎ, বেসরকারি সংস্থার এমডির বাড়িতে ইডির দীর্ঘ তল্লাশি
বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: বৃহস্পতিবার সকালে বোলপুরের রবীন্দ্রবীথি বাইপাসে একটি বাড়িতে অভিযান চালাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ভারত সরকারের আয়কর দপ্তরের বোর্ড লাগানো কয়েকটি গাড়ি থেকে চারজন আধিকারিক এসে ওই বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বাড়িটি ঘিরে রাখেন। ওই বাড়ির মালিক মহম্মদ আনারুল ইসলাম, বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আমানতকারীদের বছরে ২৪ শতাংশ সুদ দেওয়ার নাম করে ৭০-৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে অভিযুক্ত আনারুল। আমানতকারীদের ক্ষোভের আঁচ বুঝে গতবছর আগস্ট মাসে সে সপরিবারে চম্পট দেয়।
ইডি আধিকারিকরা আনারুলের শ্যালক সাইফুল ইসলামের উপস্থিতিতে প্রাসাদোপম বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেন। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে অভিযান চলে। দুপুরে ইডি আধিকারিকরা চলে যাওয়ার পরই আনারুলের শ্যালককে ঘিরে আমানতকারীরা বিক্ষোভ ও ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। বেগতিক বুঝে সাইফুলও চম্পট দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিস। সাইফুলের বাইকটি আটক করে নিয়ে যায় পুলিস। আনারুলকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি তুলে অনেক আমানতকারী এদিন বিক্ষোভ দেখান।
২০১২সালের শেষদিকে বোলপুরের নতুনপুকুরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস খুলেছিল আনারুল। জেলার এক প্রাক্তন বিধায়কের ভাইয়ের জামাই আনারুল। সেই সূত্রে এলাকায় তার প্রভাব ছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগায় আনারুল। প্রথমে পরিবারের সদস্য ও পরে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে শুরু করে। তার সংস্থার হেড অফিস রয়েছে আরামবাগে। আনারুল বোলপুরের দায়িত্বে ছিল। শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগ করে তার সংস্থা মাসে দু’শতাংশ তথা বার্ষিক ২৪শতাংশ হারে সুদ দেবে বলে জানিয়েছিল। তাতে প্রভাবিত হয়ে অনেক গ্রাহক টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কয়েক বছর সুদও অনেকে পেয়েছেন বলে দাবি করেন। ২০১৬সাল থেকে তার পসার ক্রমেই বাড়তে থাকে। আমানতকারীদের দাবি, শুধুমাত্র বোলপুর শহর থেকেই ৭০-৮০কোটি টাকা তুলেছে আনারুল। ২০২৩সালে ওই সংস্থা আচমকা সুদ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। আসল টাকা ফেরত দিতেও গড়িমসি করছিল বলে অভিযোগ। উপভোক্তাদের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এদিন হানা দেয় ইডি। বাড়ি থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ইডি আধিকারিকরা চলে যাওয়ার পরই সাইফুলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় আমানতকারীরা। টাকা ফেরতের দাবিতে তাঁরা সরব হন। সাইফুলের বাইকের চাবি কেড়ে বিক্ষুব্ধরা তাঁকে ধাক্কাধাক্কিও করেন বলে অভিযোগ। যদিও সুযোগ বুঝে ওই এলাকা থেকে চম্পট দেন সাইফুল। পরে বোলপুর থানার পুলিস এসে তার বাইকটি আটক করে। আমানতকারী শেখ রাজেশ, ফাইজুর রহিম বলেন, অনেকে বছরের পর বছর সুদ পেয়েছে বলে আমরাও উৎসাহিত হয়ে টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু ২০২৩সালের পর থেকে প্রতারণা ধরতে পারি। টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করে আনারুল। মামলা করা হলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। এরপরই আনারুল গা ঢাকা দেয়। জানা গিয়েছে, এদিন সন্ধ্যায় আনারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতেই তাকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হয়।