• চিপস চুরির বদনাম দিয়ে হেনস্তা, পাঁশকুড়ার বিষ খাওয়া সেই ছাত্রের মৃত্যু, শোক
    বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: চিপসের প্যাকেট চুরির বদনাম দিয়ে হেনস্তা করা সেই ছাত্র চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেল। মৃতের নাম কৃষ্ণেন্দু দাস(১৩)। বাড়ি পাঁশকুড়া থানার কেশাপাট গ্রাম পঞ্চায়েতের গোসাইবেড় বাজার এলাকায়। ওই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মায়ের উদ্দেশে সুইসাইড নোট লিখে ওই পড়ুয়া আত্মঘাতী হয়েছে। হৃদয়বিদারক সেই সুইসাইড নোট সামনে আসতেই সকলে বাকরুদ্ধ। আগাছানাশক খাওয়ার আগে মায়ের উদ্দেশে কৃষ্ণেন্দু চিরকুটে লিখেছে, ‘মা আমি বলে যাচ্ছি। চিপসের প্যাকেট রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। চুরি করিনি।’

    ঘটনার সূত্রপাত ১৮মে রবিবার। ওইদিন গোসাইবেড় বাজারের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল কৃষ্ণেন্দু। স্থানীয় এক দোকানদার পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ারের দোকানের সামনে একটি চিপসের প্যাকেট কুড়িয়ে পায় কৃষ্ণেন্দু। সেটি কুড়িয়ে বাড়ির পথে হাঁটছিল। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর দোকানদার তার হাতে চিপসের প্যাকেট দেখে বাইক দিয়ে কৃষ্ণেন্দুর সামনে হাজির হয়। তার দোকান থেকে চিপসের প্যাকেট চুরি করার বদনাম দিয়ে বাজারে মধ্যে তাকে আনা হয়। সেখানে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। চোর তকমা সাঁটিয়ে শারীরিক হেনস্তাও করা হয়। কৃষ্ণেন্দু আগাগোড়া চুরি না করার কথা বললেও দোকানদার তার কথায় কর্ণপাত করেনি। বাড়িতে যাওয়ার পর তার মা ওই ঘটনা জানার পর ছেলেকে শাসন করতে গালে সপাটে চড় মারেন।

    রবিবার দুপুরে ওই ঘটনার পর সারাদিন মনমরা ছিল কৃষ্ণেন্দু। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনি। দোকানদারের পাশাপাশি তা মা তাকে ভুল বুঝেছে বলে কৃষ্ণেন্দু মাঝেমধ্যে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। ছেলের মনের ভিতর সেই ঝড় ঠিকমতো উপলব্ধি করতে পারেননি কৃষ্ণেন্দু বাবা-মা। আত্মসম্মানে আঘাত হানার প্রতিবাদে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সদ্য‌ ঩কৈশোরে পা দেওয়া ওই ছাত্রটি। বাড়িতে আগাছানাশক ছিল। রবিবার সন্ধ্যায় সেই ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার আগে মায়ের উদ্দেশে একটা সুইসা‌ইড নোট লিখে যায়। মৃত্যুর পর ওই সুইসাইড নোট তার সম্পর্কে ভুল ধারণার অবসান ঘটাবে বলে কৃষ্ণেন্দুর ধারণা ছিল।

    প্রথমে তাকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সঙ্কটজনক অবস্থা থাকায় সেখান থেকে তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। প্রায় চার দিন যমে-মানুষে লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার সকালে কৃষ্ণেন্দুর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছনোর পর শোকে মুহ্যমান সকলেই। প্রত্যেকে ওই দোকানদার তথা সিভিক ভলান্টিয়ারের কঠোর শাস্তির দাবি তুলছেন।

    মৃতের আত্মীয় সুবোধ দাস বলেন, সামান্য এক প্যাকেট চিপসের জন্য প্রকাশ্য বাজারে হেনস্তা করা হয়েছিল। কানধরে ওঠবস করানোর পাশাপাশি মারধর করা হয়েছিল। সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, কৃষ্ণেন্দু ওই দোকান থেকে চিপসের প্যাকেট চুরি করেনি। আমরা ওই দোকানদারের কঠোর শাস্তি চাইছি। মৃতের বাবা কার্তিকবাবু বলেন, ছেলে এমন চরম সিদ্ধান্ত নেবে কল্পনাও করিনি। ওর আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছিল। 

    কৃষ্ণেন্দু স্থানীয় বাকুলদা হাইস্কুলে পড়াশোনা করত। পড়াশোনাতেও ভালো ছিল। তার মৃত্যুর খবরে স্কুল কর্তৃপক্ষ শোকস্তব্ধ। প্রধান শিক্ষিকা তাপসী নন্দী বলেন, অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া আমাদের আরও এক ছাত্র পথ দুর্ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছে। দুই ছাত্র প্রায় একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আমরা সকলেই শোকার্ত।
  • Link to this news (বর্তমান)