• দুই ছেলেকে ঘুমন্ত অবস্থায় নোড়া দিয়ে থেঁতলে দিল মা
    বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বহরমপুর: ঘুমন্ত অবস্থায় দুই ছেলের মাথা নোড়া দিয়ে থেঁতলে দেওয়ার অভিযোগে উঠল মায়ের বিরুদ্ধে। নৃশংসভাবে খুনের এই চেষ্টা প্রতিবেশীরা যাতে বুঝতে না পারেন, তারজন্য বন্ধ ঘরে ফুল সাউন্ড দিয়ে টিভি চালিয়ে দিয়েছিল অভিযুক্ত মা। বুধবার দুপুরে ঘটনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুই ছেলেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে ছোট ছেলেকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসা। মৃতের নাম অর্ঘ্যদেব মজুমদার (৯)। মেডিক্যাল কলেজের ভেন্টিলেশনে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে এগারো বছরের বুদ্ধদেব মজুমদার। ঘটনাটি করিমপুর থানার আনন্দপল্লি মধ্যপাড়ার। ঘটনায় অভিযুক্ত রিঙ্কি মজুমদারকে গ্রেপ্তার করেছে করিমপুর থানার পুলিস। প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান, ধৃত রিঙ্কি মানসিক অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। 

    পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রিঙ্কি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছে। তাকে সুস্থ করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার পাশাপাশি বাড়িতে ওঝা ডেকেও বারকয়েক ঝাড়ফুঁক করা হয়েছিল। কিছুদিন ভালো থেকে আবার বাড়িতে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করত। রিঙ্কির স্বামী সূর্য মজুমদার বলেন, আমি সোনার দোকানে কাজ করি। বাড়িতে না থাকলে এর আগে একাধিকবার দুই ছেলেকে বেধড়ক মারধর করেছে। কিন্তু এভাবে প্রাণে মেরে ফেলবে, এরকম কোনও ধারণা আমাদের ছিল না।

    আনন্দপল্লি এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে দুই ছেলেকে নিয়ে মজুমদার দম্পতি থাকতেন। সুর্যবাবুর দাবি, বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর অস্বাভাবিক আচরণ সামনে আসতে শুরু করে। ক্রমশ তা বাড়তে থাকে। বুধবার দুপুরে দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়িতেই ছিল রিঙ্কি। দুপুর ৩টে নাগাদ দুই ছেলে ঘুমিয়ে ছিল। সেইসময় ঘরে জোরে টিভি চালিয়ে দিয়ে ঘুমন্ত দুই ছেলেকে নোড়া দিয়ে প্রবলভাবে আঘাত করে মাথা থেঁতলে দেয় সে। বিছানায় রক্তাক্ত অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিল দুই ভাই। মেঝেতে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিল রিঙ্কি। সাড়ে ৩টে নাগাদ স্বামী ফিরতে স্বাভাবিকভাবেই দরজা খুলে দেয় সে। ঘরে ঢুকেই দুই ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে চমকে যান সুর্যবাবু। রক্তমাখা নোড়াটি বিছানাতেই পড়েছিল। সামগ্রিক ভাবে এই চিত্র দেখে কী ঘটেছে, সেটা বুঝতে তাঁর আর কোনও অসুবিধা হয়নি। প্রতিবেশীদের ডেকে দুই ছেলেকে করিমপুর হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক দু’জনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। 

    এদিকে খবর পেয়ে করিমপুর থানার পুলিস বাড়ি থেকে রিঙ্কিকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে থানাতেই গ্রেপ্তার করা হয়। সুর্যবাবুর ভাই জয়দেব মজুমদার বলেন, শিক্ষিত মেয়ে। কিন্তু কেন এই ঘটনা ঘটাল, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। যখন সুস্থ থাকত, তখন কিছুই বোঝার উপায় থাকত না। একেবারে সাধারণ। তবে নৃশংস খুনের ঘটনায় দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
  • Link to this news (বর্তমান)