• তেহট্টে রাতে খোলা থাকে না ওষুধের দোকান, সমস্যার মধ্যে রোগীর পরিবার
    বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, তেহট্ট: তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল সহ বেশ কয়েকটি নার্সিংহোম থাকা সত্ত্বেও রাত ১১টার পরে কোনও ওষুধের দোকান খোলা থাকে না। ফলে সমস্যায় পড়ছেন রোগীর আত্মীয় ও বাসিন্দারা। তখন ভরসা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। সেখানে আবার সব জরুরি ওষুধ পাওয়া যায় না। ফলে রাতে ওষুধের জন্য নাকাল হতে হয় রোগীর আত্মীয়স্বজনদের। 

    ক’দিন আগে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা নিয়ে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা পাচুগোপাল বিশ্বাস। রাত ১১টা নাগাদ চিকিৎসক তাঁকে দেখে প্রেসক্রিপশনে একটি জরুরি ওষুধ লেখেন। কিন্তু, সেই রাতে আশেপাশের ওষুধের সমস্ত দোকান বন্ধ থাকায় ওই ওষুধের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় তার বাড়ির লোকজনকে। শেষ পর্যন্ত এক ওষুধের দোকানের মালিককে বাড়ি থেকে ডেকে দোকান খুলিয়ে সেই ওষুধ সংগ্রহ করতে হয়েছিল। এই সমস্যা শুধু পাচুগোপালবাবুর একার নয়। প্রতিদিন রাতেই কেউ না কেউ ওষুধ পাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আশেপাশের গ্রাম শুধু নয় পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের একটা অংশের কয়েক লক্ষ মানুষ চিকিৎসার জন্য তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। রোগীদের সুবিধার্থে হাসপাতাল চত্বরে রয়েছে একটি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। কিন্তু অনেক সময় রাতে প্রয়োজনীয় ওষুধ মেলে না সেই দোকানে। তখন চরম দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় রোগী ও তার পরিবারকে। তেহট্টের বাসিন্দা ও এলাকার গৃহবধূ মধুমিতা বিশ্বাস বলেন, তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের আশেপাশে প্রায় আট-১০টি ওষুধের দোকান রয়েছে। অথচ রাত প্রায় ১০টার পর থেকে সেই সব ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। গত এক বছরে নিজের ও স্বামীর অসুস্থতার জন্য তিনবার চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে যেতে হয়েছে। একবার দিনে হলেও বাকি দু’বার রাতে হাসপাতালে গিয়ে একই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানে সেই ওষুধ না পেয়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে এনে ওষুধ নিতে হয়েছিল। স্থানীয় কেউ কেউ এভাবে পরিচিত দোকানদারকে ডেকে ওষুধ সংগ্রহ করতে পারলেও বাইরের মানুষদের সেই সুযোগ থাকে না। বিশেষ করে যেসমস্ত রোগীর সঙ্গে কোনও মহিলা থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আরও সমস্যা হয়। 

    তেহট্টের এক ওষুধ ব্যবসায়ী অশোককুমার ঘোষ বলেন, বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে যে কোনও একটি ওষুধের দোকান সারা রাত খোলা থাকত। ওষুধের ব্যবসা আর পাঁচটা ব্যবসার থেকে আলাদা। এখানে লাভের পাশাপাশি পরিষেবার বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু, নিরাপত্তা ও আর্থিক কারণে এখন আর খোলা থাকে না। রাতে অনেক সময় মদ্যপ মানুষজন এসে ঝামেলা করে। আবার রাতে ওষুধের দোকান খোলা রাখতে গেলে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক দিয়ে একজন কর্মচারীকে রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে কোনওদিন ১০০ টাকার ওষুধও বিক্রি হয় না। যে কারণে আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হয়। পলাশীপাড়া তেহট্ট জোনের বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আব্দুল মালেক মোল্লা বলেন, এর আগেও স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে রাতে দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু, নিরাপত্তার কারণে আবার তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে মানুষের সুবিধার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মানবিকভাবে দেখা হবে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)