• রাতবিরেতে হাতির হানা ঝাড়গ্রামে, আতঙ্কে নির্ঘুম নিশিযাপন বাসিন্দাদের
    বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামে হাতির হানা ক্রমশ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। রাত হলেই হাতির পাল কিংবা দলছুট হাতি গ্ৰামে গ্ৰামে হানা দিচ্ছে। বুধবার লোধাশুলির শালতোড়িয়া সাঁওতালডিহি গ্ৰামে একটি হাতি রাতভর তাণ্ডব চালায়। একাধিক বাড়ির দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। পানের গুমটি উপড়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। শাটার ভেঙে দোকানের ভিতর থেকে আলুর বস্তা বের করে আনে। আসন্ন বর্ষায় গ্ৰামগুলিতে হাতির হানা বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, বর্ষার সময়ে জমিতে জল জমে যায়। হাতির পাল জলজমা মাটি এড়িয়ে চলে। এখন জেলাজুড়ে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। জমিতে জল জমে থাকছে। তাই খাবারের সন্ধানে হাতির পাল গ্ৰামে ঢুকছে। খাবার না পেলে বেপরোয়া তাণ্ডব চালাচ্ছে। ঝড়বৃষ্টির হলেই গ্ৰামগুলিতে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। হাতির পাল নিঃশব্দে গ্ৰামে ঢুকে পড়ছে। রাতবিরেতে বাড়ির দরজায় ধাক্কা, ধানের গোলা, দোকান ভাঙার শব্দে গ্ৰামবাসীদের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

    কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক ২০২৪ সালে হাতির হানায় মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত বছর দেশে হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনায় বাংলা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। প্রথম স্থানে ওড়িশা ও তৃতীয় স্থানে ঝাড়খণ্ড। ঝাড়গ্রামে হাতির হানায় একের পর এক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম বন বিভাগে ২০২২-২৩ সালে ২৮ জন, ২০২৩-২৪ সালে ১৭ জন, ২০২৪-২৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু না থামায় জেলাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। শালতোড়িয়া গ্ৰামের বাসিন্দা আশিস দাস বলেন, এখন মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ থাকছে না। হাতির পাল প্রায় দিন গ্ৰামে ঢুকছে। গতকাল রাত সাড়ে বারোটার সময় মারাত্মক আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি আমার ধানের গোডাউনের জানলার লোহার গ্ৰিল বেঁকিয়ে দিয়েছে। শুঁড় ঢুকিয়ে ধান খেয়েছে। দোকানের সামনে একটা পানের গুমটি ছিল সেটা উপড়ে ফেলে দিয়েছে। বাজারের একটি দোকানের শাটার পুরো ভেঙে দিয়েছে। গ্ৰামের অনেক বাড়ির দরজা ভাঙার চেষ্টা করেছে। গ্ৰামের অপর বাসিন্দা শিবশঙ্কর মাহাত বলেন, রাত সাড়ে বারোটার সময় দরজায় প্রবল ধাক্কা শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় গ্ৰামজুড়ে অন্ধকার ছিল। বৃষ্টি পড়ছিল। সারারাত ভয়ে ঘুম হয়নি। ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের এক আধিকারিক বলেন, বারডাঙ্গা লোধাশুলি বিটে এই মুহূর্তে ৬০ থেকে ৭০টি হাতি আছে। হাতি দিনে ১৬ ঘণ্টা ঘাস, পাতা, ফল, গুল্ম খেয়ে কাটায়। বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে থাকায় খাবারের সন্ধানে এবার গ্ৰামে ঢুকছে। তবে নিয়মিত হাতি ড্রাইভ করা হচ্ছে। গ্ৰামবাসীদের রাতে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)