• জয়চণ্ডী স্টেশনকে অমৃত ভারত করে লাভ কী, প্রশ্ন স্থানীয়দের
    বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া ও সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: ‘খাঁচাটার উন্নতি হইতেছে, কিন্তু পাখিটার খবর কেহ রাখে না।’ ‘তোতা কাহিনী’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝিয়েছিলেন, বাহ্যিক আড়ম্বরের কারণে প্রকৃত উদ্দেশ্যই অধিকাংশ সময় হারিয়ে যায়। ঠিক যেমনটা ঘটেছে কেন্দ্রের ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে। এই প্রকল্পের প্রায় ১১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী স্টেশনের আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। অথচ, স্টেশনে ট্রেনের সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা। যে গুটিকয়েক ট্রেন চলে, সেগুলিও সময়ে চলে না! রাতে যে ট্রেন স্টেশনে পৌঁছানোর কথা, সেই ট্রেন আসে ভোরে! জেলার বাসিন্দাদেরও দাবি, মানুষ স্টেশনে যান ট্রেনে চড়তে। সেই ট্রেনই যদি সময়ে না চলে তাহলে এত আড়ম্বরে লাভ কী? কীভাবে সময়ে ট্রেন চলবে, ট্রেনের সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো হবে, সেদিকেই মনোনিবেশ করুক রেল। 

    অমৃত ভারত প্রকল্পে দেশের মোট ১০৩টি স্টেশনের আধুনিকীকরণের কাজ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার তার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নবরূপে সেজে ওঠা জয়চণ্ডী স্টেশনেরও এদিন ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই উপলক্ষ্যে রেলের তরফ থেকে একটি অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ সরকার, রঘুনাথপুর বিধানসভার বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউরি, আদ্রা ডিভিশনের ডিআরএম সুমিত নারুলা সহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। রেল সূত্রের খবর, ঝাঁ চকচকে রেল স্টেশনের অন্দরমহল বিভিন্ন সাজে সেজে উঠেছে। প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে তোরণ। চলমান সিঁড়ির সঙ্গে বসানো হয়েছে লিফ্ট। চিত্রশিল্পীদের আঁকা নানান চিত্রে স্টেশন চত্বর ভরে উঠেছে। প্রথম শ্রেণির বিশ্রামকক্ষকে আধুনিকীকরণ করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। ট্রেন ইনফরমেশন বোর্ড ও নতুন কোচ ইন্ডিকেশন বোর্ড (সিআইবি) লাগানো হয়েছে। আরও কত উন্নয়ন!

    আদ্রা ডিভিশনের নিত্যযাত্রীদের দাবি, কোনওদিনই এই শাখায় ট্রেন সময়ে চলে না। অমৃত ভারত স্টেশনের উদ্বোধনের দিনেও হাওড়া ইন্টারসিটি সাত ঘণ্টা লেট। সকাল ৯টায় যে ট্রেন পুরুলিয়া থেকে ছাড়ার কথা, সেই ট্রেন বিকেল চারটেয় পুরুলিয়া এসে পৌঁছেছে! বিকেল চারটে ৫০ মিনিট যে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা, সেই ট্রেন কখন ছাড়বে তার কোনও ঠিক নেই! নিত্য ট্রেন দেরির জন্য এদিন জয়চণ্ডীতে অনুষ্ঠান বয়কট করেন বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, আদ্রা শাখায় প্রতিদিন ট্রেন দেরিতে চলছে। করোনার সময়ে বন্ধ হওয়া বহু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন এখনও চালু হয়নি। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার বহু রেলপ্রকল্পের কাজ এগয়নি। স্টেশনের আধুনিকরণের থেকেই যাত্রী পরিবহণের ব্যাপারে রেলের বেশি জোর দেওয়া উচিত। রঘুনাথপুরের বাসিন্দা স্বপন মিত্র, স্বদেশ প্রিয় মাহাত বলেন, জয়চণ্ডী স্টেশনে এমনিতে হাতেগোনা ট্রেন থামে। তাও সময়ে চলে না। রেলের এই খামখেয়ালিপনার কারণে মানুষ এই পর্যটনকেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তৃণমূলের জেলা সম্পাদক স্বপন মাহাথা বলেন, জয়চণ্ডীতে ওভারব্রিজ না থাকার জন্য চরম দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। জয়চণ্ডী থেকে আসানসোল যেতে আধ ঘণ্টার পথ বর্তমানে তিন-চার ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে রেলের ভাবা উচিত। 

    এনিয়ে আদ্রা ডিভিশনের ডিআরএম বলেন, সাঁতরাগাছিতে কাজ চলছে। সেই কারণে ট্রেন দেরিতে চলছে। আগামীতে এই সমস্যা আর থাকবে না। যদিও নিত্যযাত্রীদের অনেকেই বলেন, এই একই গল্প বহু বছর ধরেই শুনে আসছি।
  • Link to this news (বর্তমান)