ফলন নেই, বাজার থেকে উধাও নবাবদের পছন্দের কোহিতুর আম
বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: নবাবদের প্রিয় আম ছিল কোহিতুর। সিরাজদ্দৌলার আমলে এই আমের কদরই ছিল আলাদা। সেই নবাবি আমল আর নেই। তাদের প্রিয় সেই আমও আজ বিপন্ন হওয়ার পথে। উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টি গাছ রয়েছে। বহু পুরনো গাছে ফলন নেই। সেকারণে বাজারে এই আম আর দেখা যাচ্ছে না। কিছু আম দেখতে হুবহু কোহিতুরের মতো। সেটাই বাজারে আসল বলে চালানো হয়। হর্টিকালচার দপ্তরের আধিকারিক রাহুল চক্রবর্তী বলেন, হিমসাগর বা অন্য প্রজাতির এক একটি গাছে কোনও কোনও বছর দু’-তিন কুইন্টাল ফলন হয়। কিন্তু কোহিতুর গাছে খুব বেশি হলে ২০কেজি ফলন পাওয়া যায়। সেটাও সব বছর হয় না। বেশি বৃষ্টি বা কড়া রোদ হলে আম নষ্ট হয়ে যায়। এই আম অত্যন্ত শৌখিন। গাছ থেকে তা পাড়ার সময়ও অনেক যত্ন নিতে হয়। তাছাড়া গাছের বয়স বেশি না হলে সেভাবে ফলন পাওয়া যায় না।
উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিকরা বলেন, এই আমের স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা। আম পাড়ার পর তুলো জড়িয়ে রাখতে হয়। ধাক্কা লাগলেই তা নষ্ট হয়ে যায়। নবাবি আমলে এই আম কিছুক্ষণ মধুর মধ্যে ডুবিয়ে রেখে খাওয়া হতো। তা কাটার জন্য বাঁশের ছিলা ব্যবহার করা হতো। এখনও এই আমের দাম রয়েছে। প্রতি পিস আম ৪০০-৫০০টাকায় বিক্রি হয়। সাধারণত বড় শহরের প্রদর্শনীগুলিতে কোহিতুর রাখা হয়। উদ্যানপালন দপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সাফল্য এখনও আসেনি। গাছ বড় হলেও ফলন পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি জাপানের মিয়াজাকি আমের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কিন্তু তা স্বাদে কোহিতুরের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ভোজনরসিকদের পাতে এই আম একবার উঠলে তা পেতে বারবারে মন চায়। বর্ধমান শহরের বাসিন্দা দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই আমের কাহিনী শোনার পর তা আনতে দু’বছর আগে মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলাম। দেড়শ টাকা পিস হিসেবে ১০টি আম কিনেছিলাম। বাড়িতে এনে জানতে পারি সেগুলি কোহিতুর নয়। হিমসাগর জাতীয় কোনও আমকে কোহিতুর বলে বিক্রি করা হয়েছে। উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক রাহুল চক্রবর্তী বলেন, সম্প্রতি বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির আম এসেছে। কিন্তু কোহিতুরের জায়গা কেউ দখল করতে পারেনি। কথিত রয়েছে, সিরাজদ্দৌলার ইচ্ছেয় বিভিন্ন প্রজাতির আম গাছ সেইসময় তৈরি করা হয়েছিল। একাধিক প্রজাতির সেরা চারার সংমিশ্রণে কোহিতুর তৈরি হয়েছিল। নবাবের ইচ্ছে পূরণ করতে সেইসময় সারা দেশ থেকে সেরা আমগাছের চারা মুর্শিদাবাদে আনা হয়েছিল। সেখান থেকে জন্ম হয় নবাবের প্রিয় কোহিতুরের।