শ্রমিকের কাজ করতে চাপ অসমে, কৃষ্ণনগরের ইঞ্জিনিয়ারকে উদ্ধার
বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: অসমে একটি নির্মাণ প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিযুক্ত হলেও, বাস্তবে শ্রমিকের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা সঞ্জিত মুখোপাধ্যায়কে। এমনকী, এক মাস ধরে তাঁকে কার্যত গৃহবন্দি করে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হতেই তৎপর হয় কোতোয়ালি থানার পুলিস। ইতিমধ্যেই তারা অসমের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। শুক্রবারের মধ্যেই সঞ্জিতবাবুকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছে পুলিস। অভিযোগ দায়ের হওয়ার ৪৮ঘণ্টার মধ্যেই ভিনরাজ্য থেকে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাকে উদ্ধার করতে পারায় পুলিসের ভূমিকা সর্বত্রই প্রশংসিত হচ্ছে।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার ডিএসপি শিল্পী পাল জানান, কয়েকদিন আগে আমাদের কাছে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সঞ্জিতবাবুর পরিবার জানায়, তিনি অসমে আটকে পড়েছেন। তাঁকে দিয়ে জোর করে শ্রমিকের কাজ করানো হচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে মামলা রুজু করি এবং অসম পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সেখানকার পুলিসের সহায়তায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জিতবাবুর বাড়ি কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার নেদেরপাড়া এলাকায়। প্রায় এক মাস আগে অসমের একটি ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের প্রস্তাব পান তিনি। যদিও এই বিষয়ে কোনও লিখিত চুক্তি হয়নি। সেইমতো তিনি অসমের শিলচর শহরে যান। কিন্তু সেখানে তাঁকে প্রকৃত ইঞ্জিনিয়ারিং কাজকর্মের পরিবর্তে শ্রমিকের মতো কঠোর পরিশ্রম করানো হয়। কাজ করতে অস্বীকার করলে তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয় বলে অভিযোগ। মানসিকভাবে হেনস্তাও করা হয়। কয়েকদিন আগে একবার বাড়িতে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে নিজের দুরাবস্থার কথা জানান সঞ্জিতবাবু। এরপর থেকেই তাঁর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সঞ্জিতবাবুর স্ত্রী সাগরিকাদেবী গত মঙ্গলবার কোতোয়ালি থানায় এসে স্বামীর নিখোঁজ এবং নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে কোতোয়ালি থানার পুলিস দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অসম পুলিসের সহযোগিতায় সঞ্জিতবাবুকে উদ্ধার করে। বর্তমানে কোতোয়ালি থানার একটি দল শিলচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
পুলিস সূত্রে খবর, আগামীকালের মধ্যেই সঞ্জিতবাবুকে নিরাপদে কৃষ্ণনগরে ফিরিয়ে আনা হবে। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে এবং অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিস।
এই ঘটনায় ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার মানুষজনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পাশাপাশি, কাজের নামে প্রতারণা এবং জোর করে শ্রমিকের কাজ করানোর মতো অপরাধের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সক্রিয়তা প্রশংসিত হয়েছে।