বছরভর আমের সংরক্ষণের জন্য লালবাগে নবাবের তৈরি ‘আম্বাখানা’র অস্তিত্ব বিপন্ন
বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, লালবাগ: রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লালবাগ শহরের চক বাজার এলাকায় নবাবদের আম সংরক্ষণ কেন্দ্র বা আম্বাখানার অস্তিত্ব বিপন্ন। প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন এই নবাবি নিদর্শনটির দেওয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে। দেওয়ালের প্রতিটি ইটে ঘুণ ধরেছে। দেওয়াল ফুঁড়ে গজিয়ে উঠেছে বট, অশ্বত্থ, নিম প্রভৃতি গাছ। নবাবি ইতিহাসের এই নিদর্শনটি সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবিতে সরব হয়েছেন ইতিহাসপ্রেমী থেকে সর্বস্তরের মানুষ।
মুর্শিদাবাদের নবাবরা আম বিলাসী ছিলেন। মুর্শিদকুলি খাঁর সময় থেকে আম বিলাসিতার কথা জানা যায়। মুর্শিদকুলি খাঁর জামাই সুজাউদ্দিন খাঁর সময়ে মুর্শিদাবাদে একাধিক বাগান গড়ে ওঠে। তিনি লোক পাঠিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা উন্নত প্রজাতির আমগাছ নিয়ে এসে বাগান তৈরি করেছিলেন। শোনা যায়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকেও একাধিক প্রজাতির আমগাছ আনিয়ে নিজের বাগানে লাগিয়েছিলেন। বাগানে উৎপন্ন আম বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করে পরবর্তী কয়েক মাস ধরে খাওয়ার জন্য চক বাজার সংলগ্ন এলাকায় তৈরি করেন আম্বাখানা। সেখানে কর্মচারী নিয়োগ করেন। তাঁদের কাজ ছিল উন্নত নতুন প্রজাতির আমের খোঁজ নেওয়া, গাছ লাগানো ও তাঁর পরিচর্যা করা। মুর্শিদাবাদ নবাবদের ইতিহাস থেকে জানা যায়, কোহিতুর, কালাপাহাড়, চম্পা, মোলামজাম, চন্দনখোসা, তোতা, মহারাজ পসন্দ, পাঞ্জা পসন্দ, রানিপসন্দ প্রভৃতি প্রজাতির আম বাগান থেকে পেড়ে বাছাই করে আনা হতো আম্বাখানায়। আমের বোঁটায় মধু লাগিয়ে বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করা হতো। পরে তা নবাবদের খাওয়ার জন্য পাঠানো হতো প্রাসাদে। নবাব বংশের বর্তমান সদস্য রেজা আলি মির্জা ওরফে ছোটে নবাব বলেন, সুজাউদ্দিন খাঁ আম খুব পছন্দ করতেন। প্রায় সারা বছর ধরে আম খাওয়ার জন্য আম্বাখানা বানিয়ে ফেলেন। আমের মরশুম শেষ হলেও আম্বাখানা থেকে আম নবাবদের প্রাসাদে আসত।
মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, আম্বাখানায় বিভিন্ন প্রজাতির আম সংরক্ষণ করা হতো। আম সংরক্ষণ করার জন্য এখানে নবাবি আমলে স্থায়ী কর্মচারী ছিল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আম্বাখানাটি অবহেলিত ও ভগ্নদশায় রয়েছে। নবাবি ইতিহাসের স্মারক হিসেবে আম্বাখানার সংরক্ষণ প্রয়োজন। কারণ এটি নবাবি ইতিহাসের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পর্যটকদের গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে। আম্বাখানা প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ এস্টেট ম্যানেজার বিপ্লব সরকার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।