পুলিস পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব, সিঁথিতে প্রায় এক কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ
বর্তমান | ২৩ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতা পুলিসের কর্মরত বলে বিবাহবন্ধনীর সাইটে অ্যাকাউন্ট। সেই অ্যাকাউন্ট সূত্রেই বিবাহের প্রস্তাব যায় সিঁথি থানা এলাকার এক মহিলার কাছে। বিয়ের টোপ দিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল। ছদ্মবেশী পুলিসের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে সিঁথি থানা। যদিও এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে খবর।
সিঁথি মোড় এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলা। তাঁর ৩৮ বছর বয়স। ২০১৮ সালে তাঁর বিয়ে হয়। দম্পতির যমজ সন্তান হয়। বিয়ের দু’বছরের মধ্যেই তাঁর স্বামী মারা যান। তখন থেকেই মহিলার পরিবারের সদস্যরা ফের বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। সন্তানদের লালন-পালন করার জন্যই এই চাপ। অভিযোগকারিণী পুলিসকে জানিয়েছেন, পারিবারিক চাপেই দ্বিতীয়বার বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। একটি বিবাহবন্ধনীর ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। ২০২১ সালে তিনি অ্যাকাউন্ট খুলে বিয়ের জন্য ছেলে দেখেন। ২০২২ সালে সাইটের মাধ্যমেই এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করেনি পুলিস। নিজেকে কলকাতা পুলিসে কর্মরত বলে পরিচয় দেয় ওই যুবক। পুলিসের আই কার্ডও দেখানো হয় বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন অভিযোগকারিণী।
এরপর যুগলের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ শুরু হয়। মহিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ওই যুবক। তাতে সম্মতি জানান মহিলা। এরপরেই শুরু হয় প্রতারণা। অভিযুক্ত জানায়, তাঁর পারিবারিক সম্পত্তির একাংশ মিউটেশন না করলে তাঁর পক্ষে বিয়ে করা সেই মুহূর্তে সম্ভব নয়। কিন্তু, কিছু আর্থিক সমস্যার জন্য সেই মিউটেশন প্রক্রিয়া শেষ করা যাচ্ছে না। হবু স্ত্রীর কাছে সে কোনও দাবি করেনি। কিন্তু, সরল বিশ্বাসে প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন অভিযোগকারিণী। নিজে থেকেই সেই টাকা দিতে চান ওই মহিলা। মিউটেশনের জন্য এক আইনজীবীকে ঠিক করে ওই যুবক। এই ব্যক্তি কলকাতা পুরসভা বিভিন্ন আইনি কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেন অভিযোগকারিণীর হবু স্বামী। তাঁর প্রচুর ফি, ৩ লক্ষ টাকা। সেই টাকা দিতে রাজি হন মহিলা। ফি বাবদ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে নেয় সেই আইনজীবী। এছাড়াও রেজিস্ট্রেশন সহ বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে আরও ৫০ লক্ষ টাকা আদায় করে নেয় সেই অভিযুক্ত। মহিলার দাবি, প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পরই ফোন নম্বর ব্লক করে দেয় পুলিস পরিচয় দেওয়া হবু স্বামী। বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন মহিলা। কিন্তু, তাও খোঁজ পাওয়া যায়নি। অভিযোগকারিণী নিজে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন, আদতে কোনও সম্পত্তিই নেই। সমস্ত জাল কাগজপত্র দেখিয়ে তাঁর থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সেই ব্যক্তি। এরপরেই আদালতের দ্বারস্থ হন মহিলা। আদালতের নির্দেশেই তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সিঁথি থানাকে। লালবাজার জানিয়েছে, এনিয়ে তদন্ত জারি রয়েছে।