নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এখন সময়ের অপেক্ষা। ফলে ঝাঁ চকচকে ওই রাস্তার দুইদিকের জমি এখন সোনার থেকেও দামি। অভিযোগ, সেই জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট রাজের রমরমা কারবার চলছে। এইসব জমি হাঙরদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না জলাশয় বা জলা জমিও। অভিযোগ, এবার সুপরিচিত ‘খেপলির বিল’ ভরাট শুরু হয়েছে। এই বিরাট জলাশয় এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের কাছেও রোজগারের মাধ্যম। অথচ, সকলের চোখের সামনে তা ভরাট করা হলেও কারও কোনও হেলদোল নেই। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের মদত থাকায় পুলিস ও প্রশাসন ঠুটো জগন্নাথ হয়ে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খেপলির বিলের পাশ দিয়ে গিয়েছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। প্রায় ১৯ একরের বিশাল এই জলাশয় পানিহাটি ও খড়দহের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এই বিশাল জলাশয়কে ঘিরে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা খড়দহের বিধায়ক অমিত মিত্র ইকো ট্যুরিজম পার্ক করার পরিকল্পনা করেছিলেন। যদিও পরবর্তীতে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এই জলাশয়ের মাছের উপর নির্ভরশীল বহু পরিবার। ভোর রাত থেকে এখানে মাছ ধরে তাঁরা সংসার প্রতিপালন করেন। অন্যদিকে, বর্ষার সময় এই খেপলির বিল আশপাশের পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকার জলও ধারণ করে। পানিহাটি পুরসভার বড় অংশের জলও খেপলির বিল হয়ে খড়দহ খালে পড়ে। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ একটি জলাশয় চোখের সামনে ভরাট হলেও কোনও স্তরে হেলদোল দেখা যাচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সদরহাট এলাকায় প্রকাশ্যে কয়েকশো ডাম্পার থেকে মাটি ফেলে খেপলির বিল ভরাট করা হচ্ছে। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধার থেকেই ভরাটের কাজ শুরু করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে আবার ইট দিয়ে সীমানা প্রাচীরও তৈরি করা হয়েছে। কোনও প্রভাবশালীর অনুমতি বা নির্দেশ ছাড়া কীভাবে প্রকাশ্যে এটা সম্ভব? তবে কি এই জলাশয় ভরাটের পিছনে শাসক দলেরই কোনও বড় মাথা রয়েছেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এলাকায় কোনও বাড়ির নির্মাণ হোক, বা জমিতে মাটি ফেলার কাজ– যে কোনও কিছু করতে হলে সিন্ডিকেট বাহিনীর কাছে খবর চলে যায়। এদিকে, রাস্তার উপর জলাশয় ভরাট হচ্ছে, কিন্তু তা কেউ জানেন না, তা হতে পারে না। খেপলির বিলের পাশে দিনরাত পুলিসের টহলদারি ভ্যান থাকে। বড় মাথার নির্দেশে এসব চলায় সকলের চোখে ঠুলি পড়েছেন।
স্থানীয় বারাকপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর রাজবংশী বলেন, জলাশয় বা জলা জমি ভরাট করা হলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। খড়দহের বিধায়ক তথা মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, আগে খেপলির বিল লাগোয়া দুটি জলাশয়ের একাংশ ভরাট হয়েছে। এবার খেপলির বিল ভরাটের অভিযোগ শুনছি। অবিলম্বে এই অপকর্ম রুখতে ও জলাশয়কে আগের অবস্থায় ফেরাতে আমি জেলাশাসককে চিঠি দেব। নিজস্ব চিত্র