এই সময়, বর্ধমান: শস্যবিমার বিপুল টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল বিমা সংস্থার দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক ও রায়না–১ ব্লকের বিডিও–র কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পলাশন পঞ্চায়েতের শাকনাড়া গ্রামের কয়েকশো চাষি।
তাঁদের অভিযোগ, সৈকত মুখোপাধ্যায় ও কাজল মুখোপাধ্যায় নামে বিমা সংস্থার ওই দুই প্রতিনিধি প্রভাব খাটিয়ে আত্মীয়দের নামে বিমার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এমনকী যে এলাকায় চাষের কোনও ক্ষতি হয়নি, সেই এলাকাতেও চাষের ক্ষতি দেখিয়ে বিমার টাকা তুলেছেন অভিযুক্তরা। ব্লক কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৬৫ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বিমা সংস্থার ওই দুই কর্মী!
এই ঘটনা প্রসঙ্গে জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ ভাবে বিমার টাকা আত্মসাৎ করা হয়ে থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমি ডিডি এগ্রিকালচারকে তদন্ত করে দেখে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলেছি। রিপোর্ট আসার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রায়না–১ ব্লকের বিডিও অজয় দণ্ডপাটের বক্তব্য, ‘পলাশন এলাকার কিছু চাষি এসে আমাকে তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি ব্লকের কৃষি আধিকারিক তদন্ত করে দেখছেন। তিনি রিপোর্ট দেওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’
বেশ কয়েকবছর আগে চাষিদের শস্যবিমার জন্য একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার সঙ্গে মউ চুক্তি করেছিল রাজ্য সরকার। এই সংস্থা থেকে প্রতিটি ব্লক অফিসেই দু’তিন জন করে কর্মী নিয়োগ করা হয়। যাঁদের কাজ, সরকারি কৃষি আধিকারিকের নিয়ন্ত্রণে থেকে চাষিদের বিমার ক্ষতিপূরণ কী হবে তার মূল্যায়ন করে রিপোর্ট তৈরি করা।
পরে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানি চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিমার টাকা সরাসরি পাঠিয়ে দেয়। চাষিরা যাতে আর্থিক সমস্যায় না পড়েন তার জন্য এই শস্যবিমা যোজনার প্রিমিয়াম মেটায় রাজ্য সরকার। বিমা সংস্থার ওই কর্মীরা কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের সরকারি কর্মী বলে পরিচয় দিলেও আদতে তাঁরা স্রেফ বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি। তাঁদের বেতন দেয় বিমা সংস্থা।
পলাশন পঞ্চায়েত এলাকার চাষি শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘আমার তিন বিঘা জমিতে রবি শস্যের চাষ হয়েছিল। সবটাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শেষ হয়ে যায়। তার বিমার টাকা আমি পাইনি।
অথচ সৈকত মুখোপাধ্যায় ও কাজল মুখোপাধ্যায়রা তাঁদের মামা–মামীর নামে শস্যবিমার টাকা নিয়েছেন, যাঁদের পলাশন পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি নয়।’ এলাকার আর এক চাষি সন্তোষ ঘণ্টেশ্বরী বলেন, ‘মিথ্যে তথ্য দিয়ে পাঁচ–ছ’জন আত্মীয়ের নামে শস্যবিমার টাকা আত্মসাৎ করেছেন কাজল ও সৈকত। পলাশন পঞ্চায়েত এলাকায় একজন চাষিও আলুর শস্যবিমার টাকা পায়নি।’
পলাশন পঞ্চায়েতের এক পঞ্চায়েত সদস্য রুবি হাজরার কথায়, ‘চাষিদের বিমার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পুরোটাই সত্যি। সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওায়ার দাবি জানাচ্ছি আমরাও।’