• হাতি-মানুষের সংঘাত বেড়েই চলেছে, দাঁতালের হানায় ভবঘুরের মৃত্যু
    এই সময় | ২৩ মে ২০২৫
  • এই সময়, ঝাড়গ্রাম: আবার সে এসেছে ফিরিয়া। বুধবার গ্রাম জুড়ে তাণ্ডব চালাল দলছুট এক দাঁতাল। পরের দিন, বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইলে হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে ভবঘুরে এক মহিলার। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই।

    বুধবার সন্ধ্যা থেকেই আকাশে মেঘ জমেছিল। রাত ৮টা থেকে শুরু হয় ঝড়–বৃষ্টি। সঙ্গে লোডশেডিং। ফলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে গোটা গ্রাম। আর সেই সময়ে গ্রামে হানা দেয় এক দাঁতাল।

    লোধাশুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের শালতড়িয়া, সাঁওতালডিহা গ্রামে হাতির তাণ্ডবে ঘুম ভেঙে যায় গ্রামবাসীদের। সাঁওতালডিহার বাসিন্দা দীপঙ্কর মাহাতো বলেন, ‘রাত ১টা নাগাদ একটি দলছুট দাঁতাল খাবারের সন্ধানে গ্রামে ঢোকে।

    তিনটি দোকান ভাঙার চেষ্টা করেছে এবং একজনের বাড়ির দরজা ও একটি ধানের গোডাউনের গ্রিল ভেঙে ধান খেয়েছে। গ্রাম থেকে যাওয়ার সময়ে একটি মুদির দোকানের শাটার ভেঙে আলুর বস্তা নিয়ে গিয়েছে হাতিটি।’

    জানা জানিয়েছে, খড়্গপুর বন বিভাগের কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের বারডাঙ্গা বিটের আওতায় রয়েছে ওই গ্রামগুলি। বুধবার বারডাঙ্গা বিটে ৮০টি হাতি থাকায় তাদের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে ব্যস্ত ছিল বন দপ্তর।

    সেই ফাঁকে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের লোধাশুলি রেঞ্জের দিক থেকে একটি দলছুট হাতি ঢুকে পড়ে ছোট গহরিয়া গ্রামে। ছোট গহরিয়ায় বাসিন্দা কার্তিক মাহাতোর দোকানের শাটার ভেঙে মুড়ির বস্তা বের করে খায়। সেখান থেকে পিচ রাস্তা ধরে এক কিলোমিটার হেঁটে শালতড়িয়া ও সাঁওতালডিহা গ্রামে ঢুকে পড়ে।

    প্রথমে পিয়ন হেমব্রমের মুদির দোকানের জানলা ভাঙে। তারপরে শিবশঙ্কর মাহাতোর বাড়ির দরজা ভেঙে খাবারের সন্ধান করে। সেখান থেকে বেরিয়ে আশিস দাসের ধানের গোডাউনের ধান খাওয়ার চেষ্টা করে। ধানের গোডাউনের জানালা বরাবর পানের গুমটি ভেঙে দেয় হাতিটি।

    গোডাউনের লোহার গ্রিল ভেঙে শুঁড় ঢুকিয়ে মিনিট ১৫ ধরে ধান খায়। আশিস বলেন,‘রাতে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে উঠে গোটা বাড়ি। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি, একটি দাঁতাল লোহার গ্রিল ভেঙে গোডাউন থেকে ধান খাচ্ছে।’

    গ্রাম থেকে বেরনোর সময়ে বাবলু মাহাতোর মুদির দোকানের শাটার ভেঙে একটি আলুর বস্তা শুঁড়ে টেনে বাইরে বের করে নেয়। সেখান থেকে আলু খেতে খেতেই বালিয়ার দিকে চলে যায় হাতিটি। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামবাসীদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।

    বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামে পৌঁছয় বন দপ্তরের কর্মীরা। ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে ক্ষতিপূরণের ফর্ম তুলে দেন। গ্রামের মোড়ে সাইকেল মেরামতির দোকান রয়েছে উত্তম দাসের। উত্তমের কথায়, ‘সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেই লোডশেডিং হয়ে যায়। ফলে রাতে এলাকায় হাতি ঢুকলে আমরা বুঝতে পারি না। কাছেই জঙ্গল থাকায় মাঝেমধ্যেই হাতি খাবারের সন্ধানে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।’

    খড়্গপুর বন বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে ক্ষতিপূরণের ফর্ম তুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। হাতির গতিবিধির উপরেও নজর রাখা হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)