• হদিশ অ্যানথ্রাক্সের, টিকা দেওয়া শুরু কোচবিহারে
    এই সময় | ২৩ মে ২০২৫
  • মৃত ছাগলের মাংস খেয়ে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রামে। অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়েছেন ওই মাংস খেয়ে। ব্রহ্মোত্তর চাতরা গ্রামের এই ঘটনায় ফের অ্যানথ্রাক্স প্রকোপের আশঙ্কা করেছিল রাজ্য সরকার।

    সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হওয়ায় কোচবিহারে অ্যানথ্রাক্স টিকাকরণ শুরু হয়েছে গবাদি পশুর। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে অসুস্থদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে বুধবারই স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের যৌথ দল পৌঁছেছে ওই গ্রামে।

    বৃহস্পতিবার ওই দল কলকাতা ফিরছে নমুনা নিয়ে। সেই নমুনা পরীক্ষা করা হবে বেলগাছিয়ায় প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের অধীন অ্যানিম্যাল হেলথ ল্যাবে। টেস্টের ফল জানতে অবশ্য দিন চারেক সময় লাগবে।

    অবশ্য গবাদি পশু যেখানে থাকে, সেখানকার মাটিতে অ্যানথ্রাক্স স্পোরের উপস্থিতির প্রমাণ ইতিমধ্যেই পেয়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের অধীন ইনস্টিটিউট অফ অ্যানিম্যাল হেলথ অ্যান্ড ভেটেরিনারি বায়োলজিক্যালস ল্যাব। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই গ্রামে আগামী তিন বছর লাগাতার গবাদি পশুর টিকাকরণ চলবে।

    চতুর্থ বছরে যদি কোনও সংক্রমণের খবর না-মেলে তা হলে বন্ধ হবে টিকাকরণ। আর সংক্রমণের খোঁজ মিললে চলতে থাকবে ভ্যাকসিনেশন। সরকারি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার থেকেই সেই টিকাকরণ চালু হয়েছে দিনহাটা ব্লকের ব্রহ্মোত্তর চাতরা গ্রামে।

    বুধবারই স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের তরফে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞদের যৌথ দল পাঠানো হয় ওই গ্রামে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং ব্লক মেডিক্যাল অফিসার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে গ্রামে পৌঁছয় বিশেষজ্ঞদল।

    ওই গ্রামে সম্প্রতি মারা যাওয়া ও অসুস্থ গবাদি পশু, গো-খাদ্য, খাটালের মাটির পাশাপাশি অসুস্থ ব্যক্তিদের রক্ত ও শ্বাসনালীর সোয়াবের নমুনা নিয়ে ফিরছে ওই দল।

    অ্যানথ্রাক্স সংক্রামক রোগ যা গবাদি পশুর মতো প্রাণীদের অসুস্থ করে এবং তাদের থেকে মানুষে সংক্রামিত হতে পারে। ব্রহ্মোত্তর চাতরা গ্রামে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে জোনাকু বর্মন (৬৩), তাঁর স্ত্রী ক্ষীরবালা বর্মন (৫৭) এবং পরিবারের আর এক সদস্য জয়ন্তী বর্মন (৪৫) মৃত ছাগলের মাংস খাওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

    জোনাকুকে প্রথমে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ও পরে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। মেডিক্যালেই ২২ এপ্রিল তিনি মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে দিনহাটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ক্ষীরবালা বন্ডে সই করে বাড়ি ফেরেন। ২৪ এপ্রিল বাড়িতেই তিনি মারা যান।

    প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি জয়ন্তী। কিন্তু পরিবারের বাকি দু’জনের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে তিনি ভর্তি হন কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে গত ১৪ মে মারা যান জয়ন্তী। এক সঙ্গে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় সন্দেহ তৈরি হয় পেশায় আশাকর্মী ওই পরিবারের এক আত্মীয়ের মনে।

    তিনিই স্বাস্থ্য দপ্তরে জানান। তড়িঘড়ি স্থানীয় ব্লক মেডিক্যাল অফিসারের নেতৃত্বে একটি দল ওই গ্রামে পৌঁছয়। অসুস্থদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের লক্ষণ-উপসর্গ দেখে ওই দলেরও মনে হয়, মানুষে সংক্রামিত হয়েছে অ্যানথ্রাক্স।

    এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘অসুস্থদের ত্বকে ক্ষত ছিল। অনেকেরই ডায়ারিয়া, বমি, গা গুলোনো, জ্বর এবং পেটে ও সারা শরীরে ব্যথা ইত্যাদিও ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আপাতত কারও স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা নেই।’

    তিনি জানান, অ্যানথ্রাক্স স্পোরগুলি অনেক সময়েই তাপ–প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। তাই মাংস রান্না করার পরেও জীবিত ছিল জীবাণু। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে দাবি, ব্রহ্মোত্তর চাতরা গ্রামটি নদীর ধারে বিচ্ছিন্ন এলাকায়। হয়তো সে জন্যেই স্বাস্থ্য দপ্তরে অসুস্থতার খবর পৌঁছতে দেরি হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)