দেশে হঠাৎ একটু একটু করে বাড়ছে কোভিড রোগীর সংখ্যা। আবার কি ফিরবে অতিমারী? এ রকম আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই ইউএসএ-র ফ্লরিডায় কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী।
তাঁদের অস্ত্র আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং। কোভিডের পরবর্তী অ্যাটাক হলে লড়াইয়ের স্ট্র্যাটেজি কী হবে, সেটাই বাতলে দিচ্ছে তাঁদের এআই–মডেল।
দুই বাঙালি বিজ্ঞানীর মধ্যে দেবর্ষি দত্ত ফ্লরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। শুভসিত রায় ওই ইউনিভার্সিটিতেই পোস্ট ডক্টরাল ফেলো। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তাঁদের পর পর দু’টি পেপার প্রকাশিত হয়েছিল ফ্রন্টিয়ার্স এবং এমডিপিআই জার্নালে। সেই কাজই তাঁরা আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।
দেবর্ষির আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরে, পড়াশোনা চন্দননগরে। লিওনেল মেসি এখন যে শহরে থাকেন, সেই মায়ামিতেই বাস দেবর্ষির। সেখান থেকে ফোনে দেবর্ষি বলছিলেন, ‘কোনও রোগী ভর্তির সময়ে তাঁর ব্যাপারে বাড়তি তথ্য দিয়ে এআই ও মেশিন লার্নিং আমাদের সাহায্য করবে।
কোভিড রোগীদের পুরোনো ডেটা নিয়ে এআই–মডেলকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। এখন এই ডেটাই সাহায্য করবে নতুন আসা কোভিড রোগীদের ডায়াগনোসিসে। ট্রিটমেন্ট কী হতে পারে, অর্থাৎ, তাঁর শুধু আইসিইউ দরকার, নাকি ভেন্টিলেশনেও রাখতে হবে, সে ব্যাপারে ধারণা দেবে ওই ডেটা।’
দেবর্ষির সংযোজন, ‘কোভিড যদি আবার প্যান্ডেমিকের আকারে ফেরে, তা হলে এই গবেষণা সাহায্য করবে। কারণ, রোগীর চাপ বাড়লে এই পদ্ধতিতে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও তার সম্ভাব্য গুরুত্ব বোঝা সম্ভব হবে।’
২০২০–র ১৪ মার্চ থেকে ২০২১–এর ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সাউথ ফ্লরিডা মেমোরিয়াল হেল্থ কেয়ার সিস্টেমের অধীনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫,৩৭১ জন কোভিড রোগী। কোভিডের টিকা তখনও বাজারে আসেনি। সেই সময়ে দেবর্ষিদের কাজ ছিল ওই রোগীদের বিভিন্ন রকমের ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ করা।
রোগীর বয়স, জাতি, লিঙ্গ, বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই), ডায়ারিয়া, ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, কিডনির অসুখের প্রাথমিক পর্যায় এবং নিউমোনিয়া— এই বিভিন্ন রকমের ফ্যাক্টর নোট করতে থাকেন বিজ্ঞানীরা। তাঁর সঙ্গে রোগী ধূমপায়ী কি না, হিসপ্যানিক অর্থাৎ, লাতিন আমেরিকান জাতিভুক্ত কি না, সে সবও দেখা হয়েছিল।
তার পর দেবর্ষি, শুভসিতরা দেখেছিলেন, ওই সব রোগীর মধ্যে কত জনের ভেন্টিলেশন-সহ আইসিইউ দরকার পড়েছে, কত জনের শুধু আইসিইউয়ের প্রয়োজন হয়েছিল, আবার কত জন কেবলই ইন্টারমিডিয়েট কেয়ার ইউনিটের সাহায্যেই সুস্থ হয়েছেন। ওই সব ডেটার উপরে ভিত্তি করে তৈরি হয় এআই–মডেল। যার সাহায্যে নতুন রোগীদের পরীক্ষা করার পরে চিকিৎসকরা বুঝতে পারছেন, তাঁদের কী রকম চিকিৎসা দরকার কিংবা বা এই রোগীর ক্ষেত্রে কোভিড কতটা ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
একটা উদাহরণ দিয়েছেন দেবর্ষিরা। ওই ডেটা থেকে দেখা গিয়েছিল, ডায়াবিটিস ও ডায়ারিয়া একসঙ্গে থাকলে কোভিড আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা। শুধু ডায়াবিটিস কিংবা শুধু ডায়ারিয়ায় ততটা নয়।
গবেষণায় সাফল্য পাওয়ার পরে ইউনিভার্সিটিতে এআই-এমএল (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-মেশিন লার্নিং) ক্লাব তৈরি করেছেন দেবর্ষি ও শুভসিত। যে ক্লাবে অন্যান্য বিষয়ের বিজ্ঞানীরাও যোগ দিয়েছেন। একই ছাতার তলায় মেডিক্যাল সংক্রান্ত এআই–গবেষণাকে আনার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।
দেবর্ষির কথায়, ‘হেল্থ কেয়ারে এআই যে কত বড় ভূমিকা নিতে পারে, তা বোঝা যাচ্ছে এই গবেষণায়। দরকার সঠিক মডেল তৈরির। যার মাধ্যমে কোনও রোগের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।’ সেই লক্ষ্যেই এগোতে চান দেবর্ষি, শুভসিতরা।