কৌশিক দে, মালদা
শুরুটা করেছিলেন নিজের বাড়িতে। পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে ভাগে পাওয়া জমিতে টিনের চাল ও মুলি বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করেন জ্যাম, জেলি, আচার তৈরির ‘কারখানা’। পুরাতন মালদা পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে তৈলমুন্ডি এলাকার বাসিন্দা চিররঞ্জন কুন্ডুর তখন পুঁজি বলতে ২০০ টাকা। তাই নিয়ে নেমে পড়েন মাঠে।
নিজেই কারিগর, নিজেই সেলসম্যান। পরে তাঁর কাজে হাত লাগান স্ত্রী সুকৃতি। গুণমান ঠিক থাকায় নাম করতে বেশি সময় লাগেনি। নব্বইয়ের দশকে দেশের বিভিন্ন রাজ্য ছাড়াও বিদেশে যেতে শুরু করে তাঁর প্রোডাক্ট।
চিররঞ্জনের কথায়, ‘একটা সময়ে বিরাট সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আমি ও স্ত্রী ব্যবসা দাঁড় করাতে দিনরাত পরিশ্রম করতাম। হাতে পয়সা এলে কারখানা তৈরির জন্য জায়গা কিনে আধুনিক মেশিন আনার ব্যবস্থা করি। এখন কারখানায় ৩০ জন কর্মী কাজ করেন। তাঁদের পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারছি, এটাই আমার কাছে তৃপ্তি।’
বেড়ার ঘর ছেড়ে পুরাতন মালদা পুরসভার বাচামারি এলাকায় রাজ্য সড়কের পাশে চার বিঘা জমির উপরে রয়েছে গীতা ফুড প্রোডাক্ট। গত বছর ডিসেম্বরে প্রয়াত হয়েছেন সুকৃতি। বাহাত্তর বছরের চিররঞ্জনও শারীরিক কারণে আর সময় দিতে পারেন না।
কারখানা-ব্যবসা তদারকি করেন বড় জামাই বিশ্বজিৎ দাস। চিররঞ্জন বলেন, ‘প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে একা এই ব্যবসায় নেমেছিলাম। ভাবতে পারিনি, আমার প্রোডাক্ট একদিন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও নাম করবে। রাশিয়া, দুবাই, মালয়েশিয়ায় আমার কারখানার তৈরি জেলি, জ্যামের ব্যাপক সুখ্যাতি রয়েছে।’
বিশ্বজিৎ বলেন, ‘বাবার বয়স হয়েছে। তাই কিছুটা হলেও আমি তাঁর পাশে থেকে সাহায্য করছি। শুধু মালদা নয়, পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গীতা ফুড প্রোডাক্ট আজও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে মালদার আমের জেলি, জ্যাম, আচার এবং বিভিন্ন ফলের বোতলবন্দি রসের চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন আমাদের কারখানায় এক টন খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন হয়।’
প্রতিদিন এক টন করে এই খাদ্য সামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। তবে এর থেকে অনেক বেশি উৎপাদন করার পরিকাঠামো এই কারখানায় রয়েছে।
চাহিদা অনুপাতে সেই ভাবেই এগুলি তৈরি করে বিদেশ অথবা ভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। পুরাতন মালদা পুরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘আমার এলাকায় গীতা ফুড প্রোডাক্টের একটি কারখানা রয়েছে। অল্প বয়স থেকেই এই ফুড ফ্যাক্টরির নাম এবং প্রশংসা শুনেছি।’