আসানসোলে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা ও জনসংযোগে এসে প্রশ্নের মুখে অগ্নিমিত্রা
বর্তমান | ২৪ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: এলাকায় বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা। শুক্রবার ‘পাড়ায় পাড়ায় দিদিভাই’ কর্মসূচি করতে গিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লেন স্থানীয় বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল। ‘চার বছর তো বিধায়ক আছেন, আপনার লোকজন খবর দেয়নি?’ ‘আপনার তো উচিত ছিল এই নালা করে দেওয়া।’ দাপুটে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের মুখের উপর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলার কল্যাণী রায়। এদিন দুই নেত্রীর তরজায় সরগরম হল আসানসোলের ইসমাইল এলাকা। মানুষের সমস্যা মেটাতে দু’পক্ষই একে অপরের দিকে দায় ঠেললেন।
আসানসোল পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলার কল্যাণী রায় বলেন, চার বছর হল উনি বিধায়ক হয়েছেন। এখানে একবারও এসেছেন? সামনের বছর বিধানসভা নির্বাচন, তাই ভোট নেওয়ার জন্য মানুষের কথা মনে পড়েছে। বাম আমল থেকে এখানে নিকাশি সমস্যা রয়েছে। আমরা তা মেটানোর চেষ্টা করছি। এখন দোষারোপের রাজনীতি করতে উনি নিজের লোকজনদের নিয়ে এসেছিলেন। আমি ওঁর কাছে জানতে চেয়েছি, চার বছর কী করছিলেন? কেন বিধায়ক তহবিলের টাকায় ড্রেন করা গেল না?
বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল এদিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পাঁচ-ছ’বছর ধরে এলাকার মানুষ এতটা সমস্যায় রয়েছেন, আমার জানা ছিল না। সমস্যা মেটাতে আমি আসানসোলের মেয়রের সঙ্গে কথা বলব। কাউন্সিলারের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
২০২১ সালে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভায় জয়লাভ করেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল। বিধায়ক হওয়ার পাশাপাশি রাজ্য বিজেপিতেও তাঁর পদোন্নতি হয়। তিনি রাজ্য সাধারণ সম্পাদিকা হন। কথায় কথায় মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করা অগ্নিমিত্রাকে ২০২২ সালের আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী করে আরও পুরস্কার দেয় বিজেপি। তবে, প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে তিনি শত্রুঘ্ন সিনহার কাছে পরাজিত হন। ২০২৪ লোকসভা উপনির্বাচনে তাঁকে দল আবার মেদিনীপুর থেকে লোকসভা আসনে প্রার্থী করে। ফের পরাজয়। আর রাজ্যনেত্রী, রাজ্যের নানাপ্রান্তের ভোটে লড়তে গিয়ে তাঁর নিজের বিধানসভা এলাকার লোকজনকেই ভুলে গিয়েছেন বলে প্রচার শুরু করে তৃণমূল। ‘নিখোঁজ বিধায়ক’ হিসেবে প্রচারও শুরু হয়। আসন্ন বছরেই বিধানসভা নির্বাচন, অনেকটা চাপে পড়েই ‘পাড়ায় পাড়ায় দিদিভাই’ কর্মসূচি নিয়ে নিজের এলাকায় জনসংযোগ শুরু করেছেন বিধায়ক। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কী করবে সেই প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন আর তৃণমূলকে তুলোধনা করছেন। তবে মাঝেমধ্যেই সুর কাটছে। বিভিন্ন সময়ে তাঁকে কেন এতদিন দেখা যায়নি, সেই প্রশ্নও উঠছে। এদিনও একই ঘটনার সাক্ষী থাকল আসানসোল পুরসভার ৮৫নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইলের মাদার টেরেজা সরণি। এদিন তিনি ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করে বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের এক হাজার টাকায় অভাব ঘুচবে? বিজেপি এলে কাজ পাবেন। অভাব ঘুচবে। ২০১৪ সালে বিজেপির বছরে দু’কোটি চাকরির ফানুসই নতুন মোড়কে ওড়াচ্ছেন রাজ্য বিজেপির এই নেত্রী। এরপরই তিনি নিকাশি সমস্যা দেখতে বের হন।
তৃণমূলের দাবি, ওঁর পরিকল্পনা ছিল এলাকার কাউন্সিলার, পুরসভার দোষ দিয়ে মানুষকে খেপিয়ে এলাকা থেকে চলে যাওয়ার। কিন্তু কাউন্সিলার নিজে উপস্থিত থেকে তাঁর পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছেন। আসানসোলে বিজেপি বিধায়ক ও তৃণমূল কাউন্সিলরের মধ্যে তরজা।-নিজস্ব চিত্র