• ফিল্মি কায়দায় ১৬ কিমি ‘চেজ’ পুলিশের! চোরাই স্কুটি চড়ে লুটপাট, গ্রেপ্তার মাদকাসক্ত ২ ভাই
    প্রতিদিন | ২৪ মে ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা রোডের উপর রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে একটি স্কুটি। পিছনে তাড়া করে চলেছে একটি পুলিশের গাড়ি। এভাবে প্রায় ১৬ কিলোমিটার ধরে চলল পুলিশের এই ‘চেজ’। শেষ পর্যন্ত স্কুটির তেল ফুরিয়ে এল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল চালক। আর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল স্কুটির দুই আরোহী।

    না, কোনও সিনেমার স্ক্রিপ্ট নয়। এমনই দৃশ‌্যের সাক্ষী রইলেন ফলতার বাসিন্দারা। স্কুটি বা বাইক চুরি করে বাড়ি ঘুরে ঘুরে লুটপাটের ছক। তারপর সুযোগ পেলেই কোনও বাড়ির দরজার লক ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেদার লুট। কাজ হয়ে গেলে পুরনো বাইক বা স্কুটি রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে ফের নতুনের গাড়ির সন্ধান চালাত মাদকাসক্ত দুই ভাই বাপ্পা মিস্ত্রি ও ছোটু মিস্ত্রি। আর চুরির জিনিস বিক্রি করেই কিনত মাদক। এটাই তাদের অপরাধের ‘মোডাস অপারেন্ডি’।

    ফলতায় ১৬ কিলোমিটার তাড়া করে তাদের জারিজুরি ভাঙলেন দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থানার পুলিশ আধিকারিকরা। কোনও লুটের আগেই হরিদেবপুর থানার ওসি প্রসূন দে সরকারের নির্দেশে ও আধিকারিক জয়দেব বৈরাগীর নেতৃত্বে পুলিশের টিমের হাতে চোরাই স্কুটি-সহ গ্রেপ্তার হল দুই দুষ্কৃতী।
    সম্প্রতি হরিদেবপুরের কালীতলায় এক সেনাকর্মীর বাড়ির ভিতর থেকে চুরি হয় তাঁর মোবাইল ও স্কুটির চাবি। চাবির সাহায্যে চুরি হয় স্কুটিও। হরিদেবপুর থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করে এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে। বাড়ি থেকে অনেকটা দূরেই দেখা যায়, দুই যুবক একটি স্কুটি থেকে নেমে ভিতরের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করা হয়। ফেলে দেওয়া ওই স্কুটির চাকায় হাওয়াও ছিল না। তাই নতুন স্কুটি চুরি করে তারা।

    পুলিশ আধিকারিকরা মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্ত করে জানতে পারেন, সেটি কোনওসময় দক্ষিণ ২৪ পরগনার পারুলিয়া, আবার কখনও বা মুচিশা অথবা ফলতায় ‘অন’ করা হয়েছে। বাকি সময় সেটি বন্ধ। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ ওই জায়গাগুলিতে হানা দেন।ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ বিবির হাটের কাছে একবার স্কুটিটি দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পুলিশের গাড়ি দেখেই তারা গ্রামের রাস্তা ধরে পালায়। তাদের সন্ধানে আরও কয়েকটি জায়গায় ঘুরে শেষে সকালে ফলতা ধরে আসার সময় ফের স্কুটিটি সামনে পড়ে যায় আধিকারিকদের। পুলিশের গাড়ি দেখে সেটি প্রায় ৭০ কিলোমিটার বেগে পালাতে থাকে। পুলিশের গাড়ি সেটিকে তাড়া করে শেষ পর্যন্ত ধরে ফেলে। স্কুটি ফেলে দিয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করে। যদিও তার আগেই পুলিশ দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে।

    ধৃতরা পুলিশকে জানায়, তারা ওই স্কুটি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বাড়িতে লুটপাটের ছক কষছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। এর আগেও তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। সাধারণত ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে তারা। কিন্তু একবার ধরা পড়ার পরই তারা আস্তানা পালটে নতুন ঘর ভাড়া নেয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
  • Link to this news (প্রতিদিন)