• মিয়াজ়াকি অপহরণের আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে মালদার চাষিদের
    এই সময় | ২৪ মে ২০২৫
  • কৌশিক দে

    ‘আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী’, শুধু হরিণ নয় — জাপানি মিয়াজ়াকি আমও।

    সিঁদুরে লাল রঙ। মিষ্টতায় নাকি স্পঞ্জ রসোগোল্লাকেও কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলতে পারে। মুখে দিলেই অপূর্ব একটা ফ্লেভার ছড়িয়ে গলে মিলিয়ে যায় — এমনটাই ‘অপবাদ’ আছে জাপানের মিয়াজ়াকি আম সম্পর্কে। যা রটে, তার কিছুটা তো বটেই।

    এমনি এমনি কি আর এই প্রজাতির আমের এক কেজির দাম এক লক্ষ টাকা ছাড়াতে পারে! কিন্তু নাম আর দাম তো এমনই আসে না। তাদের সঙ্গী হয়ে আসে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্কও। এ বার সেই অভিজ্ঞতাই হচ্ছে মালদার আমচাষিদের। লাখ টাকার বেশি দাম যে আমের, তার ‘কিডন্যাপ’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও তো খুব বেশি।

    আমের জায়গা হিসেবে মালদার সুনাম বহু পুরোনো। ফজলির পাশাপাশি ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি এবং রানিপসন্দের মতো আম বহু বছর ধরে আমের দুনিয়া শাসন করেছে। ২০২২–এ জাপানের বিখ্যাত মিয়াজ়াকি আম মালদার মাটিতে ফলানো যায় কি না তারই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়।

    ২০১৬–তে জাপানের একটি শহরে একজোড়া মিয়াজ়াকির দাম ভারতীয় মুদ্রায় তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়ে ওই আমকে বিশ্ববিখ্যাত করে তুলেছিল। তার পরেই মালদার মাটিতে মিয়াজ়াকি ফলানোর চেষ্টায় জোর আসে।

    তখন কৃষি দপ্তরের ‘আত্মা প্রকল্প’–র মাধ্যমে ইংরেজবাজার, বামনগোলা এবং পুরাতন মালদা ব্লকের কয়েকজন চাষিকে বিনামূল্যে মিয়াজ়াকি আমের চারা বিলি করা হয়েছিল।

    তিন বছর পর সেই চারাগাছগুলোই এই বছর আম ফলতে শুরু করেছে। আর তাতেই চিন্তা বেড়েছে চাষিদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, গাছগুলোর পূর্ণতা আসতে আরও অন্তত দু’বছর লাগবে। তবে এ বছর যে আম ধরছে, তাতে ইতিমধ্যেই সিঁদুরে লা‍ল রঙ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

    ইংরেজবাজার ব্লকের এক আমচাষি শঙ্কর মণ্ডল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘অত্যন্ত দামি এই আমকে চোরেদের হাত থেকে বাঁচাবো কী করে!’ মালদা বা মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ আমবাগানে যাতে চোরের দল উৎপাত করতে না পারে, তার জন্য এমনিতেই কড়া পাহারার ব্যবস্থা থাকে।

    তবু চুরি আটকানো যায় না। এই পরিস্থিতিতে যদি চোরেরা জানতে পারে, কোনও বাগানে বিশেষ একটা জায়গায় মিয়াজ়াকি আম ফলেছে, তা হলে তো রক্ষে নেই! মহামূল্যবান আম কী করে রক্ষা করা যায়, সেই চিন্তাই ঘুম কেড়েছে চাষিদের।

    জেলার কৃষি দপ্তরের ‘আত্মা প্রকল্প’–র প্রজেক্ট ডিরেক্টর অমল সাহা বলেন, ‘পরীক্ষামূলক ভাবে মিয়াজ়াকি আমের চারা কিছু চাষির কাছে বিলি করা হয়েছিল। সেই সব গাছে আম ধরেছে। মালদার মাটিতে জাপানি আম কেমন হয়, আমরা সবাই সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।’

  • Link to this news (এই সময়)