• প্যাপিলোমা ভ্যাকসিন: চিন্তা সচেতনতা নিয়েই, টিকা সিরামের
    এই সময় | ২৪ মে ২০২৫
  • এই সময়: মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ও যোনি আর পুরুষদের ক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গ ও মুখ–গলার ক্যান্সার। আবার লিঙ্গ নির্বিশেষে পায়ুর ক্যান্সার। সবেতেই ভিলেন অভিন্ন— হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)। অথচ এই ভাইরাসের প্রতিষেধক রয়েছে।

    কিন্তু সেই এইচপিভি ভ্যাকসিন সম্পর্কে সচেতনতার হার এখনও খুব ভালো নয়। এমনই আক্ষেপের কথা শুক্রবার চিকিৎসকদের বক্তব্যে উঠে এলো শহরে আয়োজিত একটি আলোচনা সভায়।

    বহুজাতিক সংস্থার তৈরি এইচপিভি ভ্যাকসিন বাজারে রয়েছে অনেক দিনই। কিন্তু বছরখানেক হলো দেশীয় প্রযুক্তিতে এই ভ্যাকসিন অনেক কম দামে বাজারে এনেছে সিরাম ইনস্টিটিউট। বিশ্বের বৃহত্তম এই প্রতিষেধক উৎপাদনকারী সংস্থার উদ্যোগে দেশব্যাপী সচেতনতা প্রচার শুরু হয়েছে।

    তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার থেকে তিন দিনব্যাপী ‘কঙ্কার এইচপিভি অ্যান্ড ক্যান্সার কনক্লেভ ২০২৫’ শুরু হয়েছে কলকাতায়। সেই উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভাতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্যে উঠে এলো এই টিকার প্রয়োজনীয়তার কথা।

    কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারি তথ্যই বলছে, ভারতে প্রতি বছর ১.২৩ লক্ষেরও বেশি জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঘটনা রিপোর্টেড হয়, যার মধ্যে প্রায় ৭৭ হাজার জনের মৃত্যু হয়। আবার ৯০% পায়ুর ক্যান্সার এবং ৬৩% পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের নেপথ্যেও রয়েছে এই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস।

    তবে শুধু ক্যান্সার নয়, পুরুষাঙ্গে আঁচিলের সমস্যার জন্যও যে দায়ী এই ভাইরাস, সে কথাও উঠে এসেছে চিকিৎসকদের কথায়। প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাসব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এই ভাইরাসের ১০০টি টাইপ রয়েছে। তার মধ্যে টাইপ–৬ ও টাইপ–১১ তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ। যা থেকে পুরুষ-মহিলাদের মধ্যে নিম্নাঙ্গে আঁচিল কিম্বা গুটি দেখা যায়।

    আশপাশে অনেকেরই এমনটা রয়েছে। অথচ তিনি জানেন না, শরীরে হিউম‌্যান প‌্যাপিলোমা ভাইরাস ঢুকেছে। ক্যান্সারের পাশাপাশি এইচপিভি ভ্যাকসিন এই সব থেকেও সুরক্ষা দেয়।’ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, টাইপ–১৬ ও টাইপ–১৮ শরীরে ঢুকলেই বেশি বিপদ। ৯৫% ক্ষেত্রে শরীরের ইমিউনিটি মেরে ফেলে এই ভাইরাসকে। কিন্তু ৫% ক্ষেত্রে তা শরীরে রয়ে গিয়ে ক্যান্সারের জন্ম দেয়।

    চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ১০০ জনের মধ্যে কোন পাঁচ জনের ভাগ্যে এই ক্যান্সারটা লেখা আছে, তা আগাম বোঝা যায় না। তাই ৯–১৪ বছর বয়সে ছ’ মাসের ব্যবধানে এইচপিভি ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ় নেওয়া উচিত কিশোর–কিশোরী নির্বিশেষে। আর বয়স বেশি হলে নিতে হয় তিনটি ডোজ়।

    গাইনি–অঙ্কোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীপান্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারে মৃত্যুর হার কম। কিন্তু মহিলাদের মধ্য়ে জরায়ুমুখের ক্যান্সারে মৃত্যু হার অনেক বেশি। এবং এই ক্যান্সারের হামলা ক্রমেই বাড়ছে। এবং অধিকাংশ রোগিণীই দেরি করে আসেন বলে নিরাময়ের সম্ভাবনাও কমে যায়।

    এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ চৌধুরী ও পল্লব চট্টোপাধ্যায় এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

  • Link to this news (এই সময়)