সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের সংশোধনাগারগুলিতে এই মুহূর্তে যত বন্দি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ২২০০। গত কয়েক মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি গ্রেপ্তারির সংখ্যা বাড়তে থাকায় সংশোধনাগারগুলিতে বন্দিদের জায়গার সমস্যা হচ্ছে।
তাই কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ মেনে নতুন করে ধৃত অনুপ্রবেশকারী গ্রেপ্তারির পথে না গিয়ে সরাসরি সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব বিবেচনা করছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর। শুক্রবার নবান্ন সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, বিএসএফ ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে। রাজস্থান, ত্রিপুরা, গুজরাট, দিল্লি, মহারাষ্ট্রের মতো একাধিক রাজ্যও এই নীতি অবলম্বন করেছে।
স্বরাষ্ট্র দপ্তর সূত্রের ব্যাখ্যা, অনুপ্রবেশের মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে আইনি পথে নাগরিকত্ব যাচাই এবং তারপরে তাঁদের ফেরত পাঠাতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। ২০২০ সাল থেকেই বহু বাংলাদেশির নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। ফলে তাঁদের ‘পুশ ব্যাক’ করা যাচ্ছে না।
ফলে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও জেলেই রাখতে হচ্ছে। রাজ্য সরকারের সংশোধনাগার দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, দমদম, বহরমপুর, বালুরঘাট, বনগাঁ সংশোধনগারে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর পাশাপাশি, নাইজেরিয়ান ও পাকিস্তানের নাগরিকও রয়েছে কিছু। তবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তুলনায় তাঁরা সংখ্যায় অনেক কম।
সূত্রের খবর, রাজ্যে বেআইনি ভাবে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে সাধারণত দু’ধরনের অভিযোগ থাকে। একদল জঙ্গি কার্যকলাপ, অস্ত্র বা মাদক সংক্রান্ত কার্যকলাপে যুক্ত থাকেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ আইন ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়।
আবার অনেকে কাজের সন্ধানে বা অন্য প্রয়োজনে দালালের হাত ধরে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেন সীমান্ত পার করে। তারপরে টাকার বিনিময়ে ভুয়ো নথি তৈরি করে পাসপোর্টও বানিয়ে ফেলেন। দ্বিতীয় শ্রেণির অনুপ্রবেশকারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত গ্রেপ্তারির পরে দু’বছর জেল হয়।
আদালত তাঁদের শাস্তি ঘোষণার পরেই রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি নাগরিকের খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করে কলকাতায় কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকের ব্রাঞ্চ সেক্রেটারিয়েট বা শাখা সচিবালয়কে জানিয়ে দেয়।
তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাজার মেয়াদ শেষের পরে পুশব্যাকের ব্যবস্থা করে। সূত্রের দাবি, বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ সরকার এই অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নিতে নানা টালবাহনা করছে। সেই কারণে কেন্দ্রীয় সরকারও এঁদের চিহ্নিত করে আইনি পুশব্যাক করতে নারাজ।
সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন উপকূলীয় সীমান্ত লাগোয়া একটি গ্রাম থেকে ২৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যার মধ্যে ১১ জন মহিরা, ৯ জন পুরুষ এবং ৪ জন শিশু ছিল।
নদিয়ার রানাঘাটে ৩ জন বাংলাদেশি, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় এক জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ রকম ক্ষেত্রেই চাপ কমাতে অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেপ্তারির পরে সরাসরি সীমান্তের ও পারে ফেরত পাঠানোর কথা ভাবছে স্বরাষ্ট্র দপ্তর।