• 'দেশে ফেরার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম', রিষড়ায় ফিরে অভিজ্ঞতা ভাগ করলেন পূর্ণম কুমার...
    আজকাল | ২৫ মে ২০২৫
  • মিল্টন সেন, হুগলি: 'পাকিস্তানে বন্দি হওয়ার পর আবার ভারতে ফিরতে পারব? সেই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কখন 'অপারেশান সিঁদুর' হয়েছে, জানতেও পারিনি। এখন আর সে সব বিষয় নিয়ে ভাবতেও চাই না। ভাগ্যে যা ছিল, হয়েছে। স্ত্রী অসুস্থ। মা-বাবা চিন্তায় ছিলেন। তাই ছুটি দেওয়া হয়েছে। দেশের সেবায় যখনই ডাকবে চলে যাব।', শনিবার রিষড়ার বাড়িতে বসে এই কথা বললেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ। 

    শুক্রবার রিষড়ার বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। রীতিমতো শঙ্খ-উলুধ্বনি, ফুল-মালা, হুডখোলা গাড়িতে করে হাজার মানুষের শোভাযাত্রা, শুভেচ্ছায় তাঁকে বরণ করে নেন রিষড়ার বাসিন্দারা। পাকিস্তানে আটক হওয়ার পর প্রায় একমাস স্ত্রী, পুত্র ও বাবা-মাকে দেখতে পাননি। কথাও হয়নি।

    স্বামী পাকিস্তানে বন্দি থাকাকালীন স্বামীর সুস্থতা কামনা করে শনিবারের ব্রত রেখেছিলেন স্ত্রী রজনী‌। স্বামী বাড়ি ফিরেছেন। তাই এদিন সকাল সকাল ব্রত পালনে স্থানীয় মন্দিরে পুজো দেন রজনী। পরপর তিনটি শনিবার পুজো দিয়েছেন। এরপরেও আরও ১৩টি। মোট ১৬টি শনিবার পালন করবেন রজনী। এদিন তিনি বলেছেন, 'প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পুজো করি। কিন্তু যেদিন থেকে স্বামী পাকিস্তানে বন্দি থাকার খবর পেয়েছি, সেদিন থেকেই প্রতি শনিবার মন্দিরে পুজো দিই। এখনও পর্যন্ত তিনটে শনিবার পালন হয়েছে। মোট ষোলটা শনিবার পালন করব। আগস্ট মাস পর্যন্ত চলবে।' 

    স্বামী বাড়ি ফেরার পর বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন স্ত্রী। স্বামী বাড়ি ফিরে আসার পর গোটা রাতটাই তাঁদের অনিদ্রায় কেটেছে। রজনী বলেছেন, বাইশটা দিন কীভাবে কাটল। পাকিস্থান থেকে বাড়িতে আর ফিরতে পারবেন কিনা হতাশ হয়ে পড়েছিল তাঁর স্বামী। ওখানে খাওয়া-দাওয়া ঠিক করে হচ্ছিল না। শারীরিকভাবে তাঁকে কোনও নির্যাতন করা হয়নি। কিন্তু মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে পাকিস্তানে। তাঁকে সেনার পোশাক খুলিয়ে সাধারণ পোশাক দেওয়া হয়েছিল। ছেলে সারারাত বাবা বাবা করেছে। দু'জনের কেউ একটু ঘুমাইনি। কথাবার্তা চলেছে ভোর চারটে পর্যন্ত। এত ভাল ভাবে তাঁর স্বামীকে দেশের মানুষ স্বাগত জানাবেন, তা ভাবতেও পারেননি তিনি। 

    এদিন পূর্ণম জানিয়েছেন, 'বন্দি অবস্থায় দশ দিন পর আমি আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভারতে আর ফিরতে পারব কি পারব না। সেনার চাকরি করতে গিয়ে কোনওভাবে শত্রু দেশে চলে গেলে, নিজের দেশে ফিরে আসার কোনও গ্যারান্টি থাকে না। একটা ভয় ছিল পহেলগাঁও যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমার ফেরার আশা ছিল না। বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেছেন। স্ত্রীর সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তা আমি কিছুই জানতে পারিনি। মা-বাবা, স্ত্রী সবাই চেয়েছিল আমি যাতে সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে পারি। আমি এখন বাড়ি ফিরে এসেছি। আমার ভাগ্যে যা ছিল তা ঘটে গেছে। সেটা আমি আর মনে করতেও চাই না। আমরা যখন সেনার ট্রেনিং নিই, তখন আমাদের বলে দেওয়া হয়, ভয় পেলে চলবে না। তাই আমরা কোনও অবস্থাতেই ভয় পাই না। আমাদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তা দেশের জন্য। দেশের সুরক্ষার জন্য। সেই জন্যই আমরা দাঁড়িয়ে থাকি। যখনই আমাকে দেশের সেবার জন্য ডাকবে, আমাকে যেতে হবে।' 

    ছবি পার্থ রাহা।
  • Link to this news (আজকাল)