মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গড়াগড়ি খাচ্ছে পিপিই কিট। গত দু’ একদিনের মধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আউটডোর বা পুরানো এমার্জেন্সি বিভাগ (লাল বিল্ডিং) কিংবা সুপারের চেম্বারের আশেপাশে যাঁরা পা বাড়িয়েছেন, তাঁদের নজরে এসেছে এ দৃশ্য। প্যাকেটের মধ্যে থাকা বা প্যাকেট থেকে বাইরে বেরিয়ে আসা নতুন নতুন সব পিপিই কিট ডাঁই করে ফেলা আছে নর্দমার এক পাশে। সেই দৃশ্য মেদিনীপুর শহরবাসীর মধ্যে অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে পাঁচ বছর আগের করোনার সেই দিনগুলোর কথা। একই সঙ্গে কোভিডের নয়া ভ্যারিয়েন্ট নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে। যদিও সুপারের আশ্বাস, একেবারেই ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত নামে শহরের এক শিক্ষক ও সমাজকর্মী বলেন, ‘এই পিপিই কিট দেখলেই মনে পড়ে যায়, কারও বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। আর তা থেকে আপাদমস্তক ঢাকা পিপিই কিট পরে নামছেন এক বা দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী। আর তাঁরা গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছেন ওই এলাকার করোনা আক্রান্তকে।’
জগন্নাথ পাত্র নামে মেদিনীপুরের এক দমকল কর্মী বলেন, ‘আমরা তো এই পিপিই কিট পরেই কোভিড আক্রান্তদের বাড়ি স্যানিটাইজ করে দিয়ে এসেছি।’ তবে নতুন করে দেশে করোনার প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। সেই আবহে এই পিপিই কিট এ ভাবে পড়ে থাকা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
তবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার অধ্যাপক ইন্দ্রনীল সেন অবশ্য বলেন, ‘এগুলি এক্সপায়ার হয়ে গিয়েছে বলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কোভিড নিয়ে এখন আর আতঙ্কও নেই। স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের ছোট্ট স্টোর রুমেও এদের জায়গা হয়নি। তবে কোথায় ফেলা হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবো।’
আর নতুন করে কোভিডের ভ্যারিয়েন্টের মাথাচাড়া দেওয়া নিয়ে সুপার বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে কোনও নির্দেশিকা বা সতর্কতামূলক বার্তা আসেনি। তবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের কোভিড ওয়ার্ড তো প্রস্তুত করাই আছে। নির্দেশ এলেই চালু করা হবে। এটুকু বলতে পারি এখন আর অক্সিজেনের কোনও সমস্যা হবে না। আমাদের এলএমও (লিকুইড মেডিক্যাল অক্সিজেন) প্ল্যান্ট থেকেই এখন অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়াও আছে, পিএসএ (প্রেসার সুইং অ্যাডজর্পশন।’ ভ্যাক্সিনেশন ও অন্যান্য সতর্কতার কারণে, তেমন ভয়ের কিছু নেই বলে আশ্বস্তও করেছেন তিনি।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গীও তাই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘কোভিড নিয়ে নতুন করে আর আতঙ্কের কিছু নেই। সে রকম কোনও নির্দেশিকাও আসেনি। তবে, কারও যদি বাড়াবাড়ি কোনও উপসর্গ দেখা দেয়, টেস্ট করাতে পারেন। মেডিক্যাল কলেজ এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিতে এলাইজা টেস্টের মাধ্যমে কোভিড নির্ণয় করা যাবে।’ তিনিও জানান, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরিস্থিতি হলে বা নির্দেশিকা এলে, সব রকম ভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হবে। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ভিড়ের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার করলে এবং দূরত্ব বিধি মেনে চললে, রোগ জীবাণু থেকে দূরে থাকা যায়।