অ্যাম্বুল্যান্স থেকে বাড়তি রেলের সুবিধা, শ্রাবণী মেলার আগে পুণ্যার্থীদের জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা...
আজকাল | ২৫ মে ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: তারকেশ্বরে আসন্ন শ্রাবণী মেলা। আগত পুণ্যার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আগাম গৃহীত হল একাধিক প্রস্তাব। কুম্ভমেলার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক রাজ্য প্রশাসন। শনিবার সিঙ্গুরে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে এই তথ্য জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না।
এদিন তিনি বলেছেন, তারকেশ্বরে কখনওই যেন কুম্ভমেলায় মতো ঘটনা না ঘটে। কোনও অবস্থাতেই যেন মানুষের প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে। তাই আগাম প্রশাসনিক বৈঠকে অতিরিক্ত একাধিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে বৈদ্যবাটি-তারকেশ্বর রোডে ৩৫টি লোহার লক গেট করা। গোটা রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা। রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে অতিরিক্ত ২৫টি অ্যাম্বুল্যান্স। পাশাপাশি ব্যবস্থা থাকবে টোটো এবং বাইক অ্যাম্বুল্যান্সের। সমগ্র তারকেশ্বরের মোবাইল পরিষেবা বা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য টেলিকম দপ্তরকে আবেদন করা হবে।
পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে সারারাত লোকাল ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা হবে। এই মর্মে পূর্বরেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে। একইসঙ্গে কামারকুন্ডু থেকে বর্ধমান পর্যন্ত স্পেশাল ট্রেন চালানোর আবেদনও জানানো হবে। পাশাপাশি রাস্তা এবং ট্রেনে যাতে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকে সেই বিষয়ে বিশেষ নজর থাকবে। এছাড়া রাস্তাঘাট উন্নত করা। নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি। গঙ্গার ঘাটগুলির পরিষেবা উন্নত করা, ইত্যাদি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে গোটা রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দেওয়া হবে। পাশাপাশি বৈদ্যবাটি থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত সংলগ্ন প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে অ্যাম্বুল্যান্স রাখার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও রাস্তার একাধিক জায়গায় বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা।
হাতে আর মাত্র দু'মাস। তারপরই তারকেশ্বরে শুরু হবে শ্রাবণী মেলা। একমাসের এই মেলাকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা আসবেন তারকেশ্বরে। গত বছর প্রায় ২৫ লক্ষ পুণ্যার্থী জল ঢালতে তারকেশ্বর মন্দিরে এসেছিলেন। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরে সেই ভিড় আরও বাড়বে। দূরদূরান্ত থেকে আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এদিন আগাম প্রস্তুতি বৈঠকে যোগ দেন জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে প্রয়াগরাজে আয়োজিত কুম্ভমেলা চোখ খুলে দিয়েছে। প্রশাসনের আগাম একাধিক ব্যবস্থা সত্ত্বেও নানা খামতি নজরে পড়ে। কয়েক কোটি পুণ্যার্থীর উপস্থিতিতে ঘটে যায় একাধিক দুর্ঘটনা। আগুন লেগে যাওয়া, পদপিষ্ট হয়ে পুণ্যার্থীদের মৃত্যু ইত্যাদি। সেই কথা মাথায় রেখে পুণ্যার্থীদের সুরক্ষায় শ্রাবণী মেলায় প্রশাসনের আগাম সতর্কতা। এদিনের বৈঠকে গৃহীত সুরক্ষা সম্পর্কিত নানা ব্যাবস্থা রেজুলেশন আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হুগলি জেলা শাসক মুক্তা আর্য, হুগলি জেলা গ্ৰামীণ পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন, চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, সিঙ্গুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না, হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া, হরিপালের বিধায়ক করবি মান্না, তারকেশ্বরের বিধায়ক রামেন্দু সিংহ রায়, চাঁপদানির বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অরিন্দম গুইন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব রেলের আধিকারিক, তারকেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি, দমকল বিভাগের আধিকারিক, তারকেশ্বর পুরসভা ও বৈদ্যবাটি পুরসভার প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক, বিদ্যুৎ দপ্তর, পিএইচই সহ জেলা প্রশাসনের একাধিক দপ্তরের আধিকারিকরা।
জানা গেছে, মেলা শুরুর আগে হুগলি জেলা প্রশাসনের তরফে একটি গাইড ম্যাপ উদ্ধোধন করা হবে। ম্যাপে থাকবে বৈদ্যবাটি থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় পুণ্যার্থীরা কী কী সুবিধা পেতে পারেন সেই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য। পাশাপাশি থাকবে প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর। গাইড ম্যাপটি অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হবে। অন্যদিকে ভান্ডারা দিতে আসা প্রত্যেকটি সংস্থাকে এবারে অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে অনুমতি প্রদান করা হবে ব্লক দপ্তর থেকে।