• ন্যাকের মূল্যায়নে মুখ থুবড়ে পড়ল জলপাইগুড়ির এসি কলেজ, ক্ষোভ
    বর্তমান | ২৫ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ন্যাকের মূল্যায়নে মুখ থুবড়ে পড়ল জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজ। বি ডবল প্লাস থেকে একধাক্কায় কলেজের র‌্যাঙ্ক নেমে দাঁড়াল স্রেফ ‘বি’। জলপাইগুড়ির পাশাপাশি গোটা উত্তরবঙ্গের মধ্যে অন্যতম গর্বের আনন্দচন্দ্র কলেজ। ৮৩ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের এভাবে মান নেমে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ জেলার শিক্ষামহল। কেন কলেজের র‌্যাঙ্ক এতটা নেমে গেল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। 

    চলতি মাসের ৭ ও ৮ তারিখ অনলাইনে ন্যাকের মূল্যায়ন হয়। তাতেই কলেজের একাধিক খামতি নজরে আসে ন্যাক কর্তৃপক্ষের। কলেজ সূত্রে খবর, ন্যাক যেসব বিষয়ে ঘাটতি দেখিয়ে দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কলেজে গবেষণার হাল খুবই খারাপ। শুধু তাই নয়, এক্সটেনশন প্রোগ্রামে যত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী অংশ নিচ্ছেন, কলেজের মোট পড়ুয়ার তুলনায় সেই সংখ্যা নিতান্তই কম। তাছাড়া আনন্দচন্দ্র কলেজ থেকে যেসব পড়ুয়া স্নাতক উত্তীর্ণ হয়ে চলে যাচ্ছেন, পরবর্তী ক্ষেত্রে তাঁরা কী করছেন, উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন নাকি কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছেন, না পড়াশোনা ওখানেই শেষ করে দিচ্ছেন, এ ব্যাপারে কলেজের কাছে তথ্যই নেই। কলেজের আরও কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয়েও খুশি হতে পারেনি ন্যাক কর্তৃপক্ষ। যার জেরে একধাক্কায় কলেজের র‌্যাঙ্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে।

    ২০০৪ সালে জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজ ন্যাকের কাছ থেকে বি ডবল প্লাস র‌্যাঙ্ক পায়। এরপর ২০১৬ সালে যখন ন্যাক পরিদর্শন করে, তখনও বি ডবল প্লাস তকমা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল উত্তরবঙ্গের অন্যতম পুরনো এই কলেজ। কিন্তু এবার তা হাতছাড়া হওয়ায় ক্ষুব্ধ কলেজের প্রাক্তনীরা।

    উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, জলপাইগুড়ি এসি কলেজ উত্তরবঙ্গের মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী। ন্যাকের মূল্যায়নে সেই কলেজের এভাবে মান নেমে যাওয়া দুঃখজনক। কেন এমনটা হল, তা কলেজ কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে। তবে যাই হোক না কেন, কোথায় কী ঘাটতি রয়েছে তা খুঁজে বের করে কলেজের মানোন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।

    ন্যাকের মূল্যায়নে র‌্যাঙ্ক নেমে যাওয়া নিয়ে অবশ্য জলপাইগুড়ি এসি কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস দাসের সাফাই, ন্যাক যেসমস্ত কাগজপত্র চেয়েছিল, সবটাই তাদের পাঠানো হয়। আচমকা তারা জানায়, অফলাইন নয়, অনলাইনে পরিদর্শন হবে। এরপর তারা যে এসওপি পাঠায়, সেইমতো সবটা প্রস্তুত করতে হাতে মোটেই সময় পাওয়া যায়নি। অধ্যক্ষের দাবি, আমাদের কলেজের পরিসর অনেক বড়। অনলাইনে সবটা তুলে ধরা সম্ভব নয়। তিনঘণ্টা ধরে আমরা লাইভ স্ট্রিমিং করেছি। তারপরও অনেক কিছু বাদ থেকে গিয়েছে। তাছাড়া ন্যাক কর্তৃপক্ষ খামতি হিসেবে যেগুলো তুলে ধরেছে, যদি অফলাইনে তারা পরিদর্শন করত, সেক্ষেত্রে তাদের সে ব্যাপারে বোঝানো সম্ভব হতো। অনলাইনে যেটা সম্ভব হয়নি।

    এদিকে, প্রাক্তনীদের অনেকের প্রশ্ন, ২০১৬ সালে যখন ন্যাক পরিদর্শন করে, তখন জলপাইগুড়ি এসি কলেজে সায়েন্স ব্লক ছিল না। পরে ওই ব্লক তৈরি হয়। বর্তমানে স্নাতকে ২০টি বিষয় পড়ানো হচ্ছে। বাংলায় এমএ চালু হয়েছে। খেলাধুলোয় প্রতিবছর এই কলেজ উত্তরবঙ্গে বিশেষ অবদান রাখে। তারপরও কলেজকে ন্যাকের সামনে সেভাবে কি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ? না হলে মান নামবে কেন? 
  • Link to this news (বর্তমান)