এই সময়, বানারহাট: ‘অপরাধ’ বলতে সে শুধু জঙ্গলের গণ্ডি পেরিয়ে ঢুকে পড়েছিল গ্রামের মধ্যে। আর তার মাশুল গুনতে হলো ১২ ফুটের অজগরকে। গ্রামে ঢুকে পড়ায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হলো বিশালাকার সাপটিকে।
ঘটনাটি জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি মহকুমার বানারহাট ব্লকের দুরামারি এলাকায়। শনিবার সকালে স্থানীয় একটি পুকুরের মধ্যে সাপটি দেখতে পান গ্রামবাসীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেটি প্রায় ১২ ফুটের মতো লম্বা।
কয়েক মাস আগেই জাতীয় সড়কে একটি পাইথনের লেজ ধরে টানাটানির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। এ বারও দেখা গেল সেই মানুষ–বন্যপ্রাণ সংঘাত।
এ দিন স্থানীয় এক যুবক সিরাজ আলম নিজের পুকুরে মাছকে খাবার দিতে গিয়ে হঠাৎ দেখতে পান সাপটি পুকুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রামে অজগর ঢুকেছে, এই খবর চাউড় হতেই মুহূর্তে ভিড় জমে যায় সেখানে।
এলাকাসীর দাবি, হাঁস খাওয়ার লোভেই সে এই পুকুরে চলে এসেছে। যার শাস্তিস্বরূপ গাছে বেঁধে রাখা হয় সেটিকে। অন্য দিকে ঘটনার কথা জানতে পেরে নিন্দার ঝড় ওঠে পরিবেশপ্রেমী মহলে। শুরু হয়েছে বিতর্কও।
বন্যপ্রেমীদের বক্তব্য, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী অজগর সাপ শিডিউল ওয়ানের অন্তর্ভুক্ত প্রাণী। তার গলায় এ ভাবে ফাঁস লাগিয়ে বেঁধে রাখা শাস্তিমূলক অপরাধ।
পরিবেশকর্মীরা আরও দাবি করেছেন, যে ভাবে সাপটিকে দড়ি গিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল, তাতে সেটি মারাও যেতে পারত। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাসের কর্মকর্তা নফসর আলির কথায়, ‘মানুষ–বন্যপ্রাণ সংঘাত দিনদিন বেড়েই চলেছে। এ ভাবে সাপ দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা এক প্রকার নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। যে বা যারা এটি ঘটিয়েছে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। কী কারণে বন্যপ্রাণের সঙ্গে গ্রামবাসীর এমন আচরণ, তা বন দপ্তরের খতিয়ে রাখা উচিত।’
অন্য দিকে, সাপটিকে ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ খবর দেন বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণ স্কোয়াডে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে এসে বিশালাকার সেই অজগর উদ্ধার করে নিয়ে যান বনকর্মীরা।
গ্রামের এক বাসিন্দা জিয়ারুল হক বলেন, ‘মাঝেমধ্যে বিন্নাগুড়ির জঙ্গল থেকে লোকালয়ে খাবারের সন্ধানে চলে আসছে অজগর সাপ। এর আগেও বেরুবাক নদীতে দেখা মিলেছে। প্রায়ই হাঁস, মুরগি সাবাড় করেছে। তাই এ দিন সাপটি যাতে পালিয়ে যেতে না–পারে তাই গ্রামবাসী সেটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছিল।’
বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণ স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার হিমাদ্রি দেবনাথ বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দড়ি দিয়ে বাঁধার বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’