বুদ্ধদেব বেরা, ঝাড়গ্রাম
সন্ধে নামার অপেক্ষা। তারপরেই গ্রামে যেন ভয়ের অন্ধকার জমাট বাঁধে। কখন কোথা থেকে এসে পড়বে অতিকায় হাতির দল। ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের খড়গপুর বন বিভাগের কলাইকুন্ডা রেঞ্জের বারডাঙা বিটে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে ৬০টি হাতির দল ঢুকে পড়েছে।
দিনের বেলায় জঙ্গলে থাকলেও রাত হলেই জল ও খাবারের সন্ধানে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঢুকে পড়ছে আশেপাশের গ্রামগুলিতে। ওদের সামনে কেউ পড়ে গেলে আর রক্ষে নেই। ভয়ে তাই সন্ধে হলেই ঘরে সিঁধিয়ে যাচ্ছে গোট গ্রাম।
দোকান–পাট–চায়ের ঠেক–বটতলা সব শুনশান হয়ে যাচ্ছে এই হাতিদের আতঙ্কে। বুধবার এই জঙ্গল থেকে একটি হাতি বেরিয়ে এসে শালতড়িয়া, সাঁওতালডিহা গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছে। মুদির দোকানের শাটার ভেঙে নিয়ে গিয়েছে চালের বস্তা, আলুর বস্তা। সাঁকরাইলে আবার এক ভবঘুরে মহিলার মৃত্যু হয়েছে হাতির হানায়।
শালতড়িয়া, সাঁওতালডিহা, শুকনাখালি, বড়াশুলি, বড়গহিরা, গোলবান্ধি, বালিয়া, ঢেঁরাগড়িয়া, বারডাঙা, ইন্দখাড়া ,সগরভাঙা– সহ একাধিক গ্রামে থমথমে পরিবেশ। সাঁওতালডিহা গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস দাস বলেন,‘আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
হাতির ভয়ে এই গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে ভয় করছে। জঙ্গলে এবং মাঠে কোনও খাবার নেই রাত হলেই আম, কাঁঠালের লোভে গ্রামে হাতি ঢুকে পড়ছে হাতি। আজ অল্প ঝড় বৃষ্টির কারণে বিকেল থেকে বিদ্যুৎ নেই গ্রামে। মনে হয় রাতেও ফিরবে না। হাতির ভয় প্রতিনিয়ত তাড়া করছে আমাদের।’
জানা গিয়েছে, হাতির আতঙ্কে কাজু বাগান গুলিতে কাজুর বীজ সংগ্রহ করার জন্য কেউ যাননি। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যেতেও ভয় পাচ্ছে। দুপুরে শুকনাখালি গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলে হাতির দলটি ছিল বলে জানা গিয়েছে।
ওই এলাকায় কাজু বাগানের মালিক জনমনেজয় মাহাতো বলেন,‘হাতি যে কোনও সময়ে এই জঙ্গল থেকে ওই জঙ্গলে চলে আসতে পারে। অনেকগুলি হাতি রয়েছে। তারা কাজুর ভেলা খেতে ভালোবাসে। তাই ভয়ে আজ কাজু তোলার বাতিল করা হয়েছে।’
সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে হাতির দলটি বারাডাঙা বিটের আঙ্গারনালী গ্রাম জঙ্গলে ছিল। গ্রামের বাসিন্দা সুশীল মাহাতো বলেন,‘মাঠে কোনও ফসল নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জলেও নেই। যার ফলে রাত হলেই পানীয় জল এবং গ্রামে থাকা আম, কাঁঠালের আশায় গত দু’দিন ধরে হাতি ঢুকেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই শৌচাগার বাইরে রয়েছে। রাতে শৌচাগার যাওয়ার সময়ে হাতির হানায় মৃত্যু হতে পারে।’ গ্রামবাসীদের দাবি, হাতির দলের উপর নজরদারির জন্য বনদপ্তরের এলিফ্যান্ট ট্রেকার টিম থাকলেও বল প্রয়োগ করে অন্যত্র সরাতে চাইছেন না বনদপ্তর। হাতির স্বাভাবিক গতিপথের উপরেই ভরসার রেখেছে তারা।
খড়গপুর বন বিভাগের ডিএফও মাণিশ যাদব বলেন, ‘হাতি গুলি কলাইকুণ্ডা অথবা বালিভাষা হয়ে কংসাবতী নদী পেরিয়ে মেদিনীপুর বন বিভাগে চলে যাবে। তাদের অভিমুখ ওই দিকেই রয়েছে। আমরা জোর করে ড্রাইভ করতে চাইছি না। জোর করে ড্রাইভ করলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।
হাতির গতিবিধির উপর আমাদের নজরদারি রয়েছে। এলাকার মানুষকে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।’ খড়গপুর বন বিভাগ ছেড়ে ৬০টি হাতির দল শনিবার ঢুকে পড়ে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের মানিকপাড়া রেঞ্জে।
শুক্রবার সারারাত দলটি বড়াশুলির জঙ্গলে ছিল। ঝাড়গ্রাম থানার মানিকপাড়া ও বেলতলার মাঝে কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়ক পার করে হাতির দলটি উত্তর দিকে রাধাশ্যামপুরের জঙ্গলের দিকে এগোতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে । যদিও হাতির দলটির উপরে বন দপ্তরের এলিফ্যান্ট ট্রেকার টিমের সদস্যরা নজরদারি চালাচ্ছে।