এই সময়: হাতে মেরেকেটে মাস দশেক। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে টেক্কা দিতে হলে যাবতীয় সাংগঠনিক প্রস্তুতি সেরে ফেলতে হবে দ্রুত। কিন্তু বঙ্গ–বিজেপির ঘর গোছানোর আয়োজন দেখে কার্যত হতাশ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বাংলায় তাই ‘অসম মডেল’ কার্যকরের কৌশল নিয়েছেন তাঁরা।
’২৬–এ বাংলার সঙ্গেই বিধানসভা ভোট অসমে। পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবির এখনও ভোটের দামামা বাজাতে পারেনি ঠিকই। অসমে কিন্তু সাজ সাজ রব দলের অন্দরে। আগামী দিনে পার্টির রণকৌশল ও কর্মসূচিও চূড়ান্ত করে ফেলেছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা, দিলীপ শইকিয়ার মতো অসমের শীর্ষ নেতারা।
আগামী ২৮ মে থেকে ৫ জুনের মধ্যে ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক হবে বলে ঘোষণা করেছেন তাঁরা। কোন কেন্দ্রে কে লড়বেন, তা–ও গোপনে জানানো হয়েছে বিধানসভা আসনগুলির হবু প্রার্থীদের।
তালিকা ঘোষণার অপেক্ষায় না থেকে এখন থেকেই যাতে তাঁরা কাজ শুরু করতে পারেন, সেটাই লক্ষ্য। বাছাই করা জনা চারেক সক্রিয় নেতা–কর্মীকে এখন থেকেই ভোটের হাওয়া তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অসমের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে। প্রচারের যাবতীয় খুঁটিনাটিও সামলাবেন ওঁরা।
আর বাংলায়? এ রাজ্যের একটি জেলাতেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি হয়নি। চার জেলায় সভাপতি ঘোষণাও বাকি। যে বুথগুলিতে কমিটি তৈরি হয়েছে, সেগুলির বেশিরভাগেই বিস্তর জল মেশানো বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে।
আগামী বিধানসভা ভোট পর্যন্ত সুকান্ত মজুমদারই রাজ্য সভাপতি থাকবেন, না অন্য কেউ আসবেন, সে সংক্রান্ত ধোঁয়াশাও কাটছে না। ফলে বাংলার নিচুতলার বিজেপি কর্মীরা এখনও বিভ্রান্ত। এ সব বাধাবিপত্তি দূর করে বঙ্গ–বিজেপি কবে ভোটের বাদ্যি বাজাতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতেই বাংলায় ‘অসম মডেল’ কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। সম্প্রতি কলকাতায় এসে এর সূত্রপাতও করে গিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল।
কী আছে এই মডেলে? সূত্রের খবর, অসমের স্টাইলে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব চারজন সক্রিয় নেতা–কর্মীকে দেওয়া হচ্ছে বাংলায়। রাজ্যের জেলা সভাপতিদের বনসল নির্দেশ দিয়েছেন — প্রত্যেক কেন্দ্র থেকে তিন–চারজন কর্মীকে দ্রুত বেছে নিতে হবে।
ভোটের দামামা বাজানোর ভার দেওয়া হবে এঁদেরই। কেন্দ্রগুলিতে তাঁরাই হবেন বিজেপি–র ‘লড়াকু মুখ’। বনসলের বাতলানো এই কৌশলকেই গেরুয়া শিবিরের অন্দরে ‘অসম মডেল’ বলা হচ্ছে।
যদিও বঙ্গ–বিজেপিতে এটা কতখানি উপযোগী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পার্টির অন্দরেই। বাংলার এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘২০২১–এর বিধানসভায় প্রয়োগ করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ মডেল। এ বার অসম। বাংলার নিজস্ব কোনও মডেল এত বছরেও তৈরি করা গেল না। সেটা যতদিন না হচ্ছে, ততদিন এ রাজ্যে বিজেপির ভবিষ্যৎ নেই। ভিন রাজ্য থেকে আমদানি করা মডেলে কাজ হবে না।’