এই সময়: সুপ্রিম-রায়ে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশ সল্টলেকে স্থায়ী চাকরি ফেরতের দাবিতে অবস্থান চালাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ৩ এপ্রিলের রায়ে ফের নিয়োগ পরীক্ষার যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা মেনে চাকরিহারারা পরীক্ষায় বসতে চান না বলেই বারবার জানিয়েছেন।
তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছেই এই সংক্রান্ত স্থায়ী বিহিতের দাবি জানিয়েছেন। রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে অবশ্য ৩ এপ্রিলের সুপ্রিম-রায় রিভিউয়ে ইতিমধ্যে শীর্ষ আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
কিন্তু সে নিয়ে শুনানি এখনও হয়নি শীর্ষ আদালতে। এ দিকে ৩ এপ্রিলের রায়েই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ৩১ মে’র মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে এসএসসি-কে। আর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে নিয়োগ-প্রক্রিয়া। সেই ৩১ মে হতে আর এক সপ্তাহ মাত্র বাকি।
এর মধ্যে এসএসসি যদি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না-করে, তবে নিশ্চিত ভাবেই আদালত অবমাননার মুখে পড়তে হবে তাদের। তবে সুপ্রিম রায় রিভিউ পিটিশনের শুনানি যে ৩১-মে’র মধ্যে হবে না, তা এক রকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে শুক্রবারই। কেন না সে দিন থেকেই সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়েছে দীর্ঘ দু’মাসের গ্রীষ্মাবকাশ।
ফলে রিভিউ পিটিশনের শুনানি বাকির যুক্তিতে নিয়োগ-প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে ৩১ মে’র সময়সীমা নিয়ে দোলাচলের আর কোনও সুযোগ নেই।
এই অবস্থায় কবে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে, সে নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে। বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ২০২২ সালে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংক্রান্ত নিয়োগ বিধিতে একগুচ্ছ বদলের সুপারিশ করেছিল। তা রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদনকে করতে হবে।
তবেই গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে এসএসসি। বেশ কয়েকটি নিয়মকানুন বদলাতে পারে। পুরনো নিয়ম মতো পরীক্ষার্থীরা ওএমআর শিটে পরীক্ষা দেবেন। তার সঙ্গে প্রাথমিকের মতোই দেওয়া হতে পারে কার্বন পেপার। ওই কার্বন প্রতিলিপি পরীক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া হবে।
এ ছাড়া ওএমআর শিট সংরক্ষণের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যাতে আর নতুন করে কোনও জটিলতা তৈরি না হয়। তাই ওএমআর স্ক্যানড কপি সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে প্যানেলের মেয়াদ ছিল এক বছর।
সেই মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়তে পারে। এমনকী ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রেও নিয়ম বদল হতে পারে। সেইসঙ্গে নিয়োগে ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়টিও চূড়ান্ত করতে হবে মন্ত্রিসভাকে।
এই নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় সুযোগের আশায় রয়েছেন নতুন লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী। ২০১৬-র পরে আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নিয়োগই হয়নি রাজ্যে। শিক্ষক-শূন্যতায় রাজ্যে স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রমের কথা প্রকারান্তরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদও মেনে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে তাদের মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনে।
যে অ্যাপ্লিকেশনের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট চাকরিহারা আন-টেন্টেড শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চালানোর সুযোগ দিয়েছে। নতুন সেই নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তির জন্যে তাই হন্যে নতুন চাকরিপ্রার্থীরাও।
আবার সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনের পরিণতি কী হয়, তা জানতে আগ্রহী চাকরিহারারাও। নতুন নিয়োগ-প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি এবং রিভিউ পিটিশনের ভবিষ্যৎ—এই দুটো বিষয়েই আবর্তিত হচ্ছে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের স্কুলে শিক্ষকতার স্বপ্ন।