সুশান্ত বণিক, আসানসোল
কবে থেকে শুরু টোটোর এই দৌরাত্ম্য? পুরসভা সুত্রের খবর, শিল্পাঞ্চলে টোটোর আগমন ২০১৪ সালে। শুরুতে তা সীমাবদ্ধ ছিল রানিগঞ্জ এলাকায়। ক্রমশ পরিধি বাড়তে বাড়তে এখন এনএসবি রোড, স্টেশন মোড়, সিয়ারশোল রাজবাড়ি এলাকা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকা এখন টোটোয় ছেয়ে গিয়েছে।
এমনিতে টোটো চালানোর ক্ষেত্রে পরিবহণ দপ্তরের কোনও অনুমতি লাগে না। নিবন্ধীকরণও বা বৈধ নম্বরও নিতে হয় না। সেই সুযোগকেই শহরের সমস্ত রাস্তায় এখন দাদাগিরি টোটোর। তার বিরুদ্ধে প্রথম আপত্তি এসেছিল আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে।
সংগঠনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলছিলেন, ‘সে সময়ে মিনিবাসের রুট দখল করে অবাধে টোটো চলায় মুখ থুবড়ে পড়ে আমাদের পরিকাঠামো।’ বার বার পুরকর্তৃপক্ষ ও জেলা পরিবহণ দপ্তরে অভিযোগ জানানো হয়।
২০১৬ সালে পুরকর্তৃপক্ষ ঠিক করেন, শিল্পাঞ্চল জুড়ে চলা টোটোগুলিকে বৈধতা দেওয়া হবে। তবে তা শহরাঞ্চলের কোনও বাস রুটে চলবে না। প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে গণপরিবহণের ব্যবস্থা নেই, সেখানকার বাসিন্দাদের বাস রুট পর্যন্ত যাত্রীবহন করবে টোটো। সেই সময়ে শিল্পাঞ্চল জুড়ে চলা ৮৭২টি টোটোকে বৈধতা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে আসানসোল পুরসভা।
এই কাজের দায়িত্বে ছিলেন পুরসভার মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায়। তিনি জানাচ্ছেন, প্রত্যেকটি টোটোকে পুরকর্তৃপক্ষের তৈরি করে দেওয়া নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একে বলা হয় টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন)।
কোন কোন রুটে কতগুলি টোটো চলবে, তাও ঠিক করে দেয় পুরসভা। কিন্তু মাস কয়েকের মধ্যে রাস্তায় নামে আরও কয়েকশো টোটো। টিআইএন দিয়ে নির্দিষ্ট রুটে টোটো চলাচলের প্রক্রিয়াই ভেস্তে গিয়েছে।
গত আট বছরে শিল্পাঞ্চলে টোটোর সংখ্যা ৮৭২ থেকে বেড়ে প্রায় ১০ হাজার হয়েছে। পরিবহণ দপ্তরের বক্তব্য, টোটোর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ কিমি। ফলে জিটি রোড-সহ শহরের ব্যস্ত রাস্তায় টোটোর দৌরাত্ম্যে অন্য যানবাহনের গতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
বিপাকে পড়ছেন অফিসের নিত্যযাত্রীরা। পরিবহণ আধিকারিকদের বক্তব্য, যে হেতু টোটোর নিবন্ধীকরণ হয় না, তাই পথদুর্ঘটনা হলে টোটোর যাত্রীরা কোনও রকম বিমার সুযোগ পাবেন না।
আরও একটি উল্লেখয্যগ্য বিষয়, টোটোচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। তাই শিল্পাঞ্চল জুড়ে ১৮ বছরের কমবয়সিরাও অবাধে টোটো চালাচ্ছে। এ সব বেনিয়ম বন্ধ করতে সম্প্রতি পুরকর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কমিশনারেটের ট্র্যাফিক দপ্তর। কিন্তু আখেরে কী হলো, প্রশ্ন তুলছেন নিত্যযাত্রীরা।