আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের পর এবার প্রাক্তন বিচারপতি ও বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলেন চাকরিহারারা। সল্টলেকে তাঁর বাড়ি গিয়ে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ জানান, তাঁরা এ বার সুপ্রিম কোর্টের যাওয়ার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা করছেন। পাশাপাশি ফের রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ইতিমধ্যে একটি চিঠি দিয়েছেন চাকরিহারারা। সোমবারের মধ্যে দেখা করার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সেই আর্জি মেনে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এজন্য তিনি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার কথা উল্লেখ করেছেন। কী নিয়ে আলোচনা, সে বিষয়ে চাকরিহারা শিক্ষকদের ঠিক ‘ফরম্যাটে’ চিঠি লিখতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
প্রসঙ্গত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার কীভাবে তাঁদের স্থায়ীভাবে চাকরির সুযোগ করে দিতে পারে, তা নিয়ে আলোচনায় বসতে চেয়ে মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি দিয়েছিল ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। রবিবার সেই চিঠি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানালেন, তিনি একটা চিঠি পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নতুন করে কেন আলোচনায় বসতে চাইছেন শিক্ষকরা, সেটার উল্লেখ করা নেই। সেজন্য ফের ঠিক ‘ফরম্যাটে’ চিঠি লিখতে বললেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তিনি এবং সরকার এই তিনপক্ষের উপরই সহানুভূতিশীল। বলেন, ‘আমি একাধিকবার আলোচনায় বসেছি। সরকার সহযোগিতা করতে চাইছে। যদি চাকরিহারারা বসতে চান, তাহলে কী নিয়ে আলোচনা করতে চাইছেন, নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করে চিঠি লিখুন। আগামিকাল (সোমবার) দফতরের পক্ষ থেকে নিশ্চয়ই যোগাযোগ করবে।”
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া ওই চিঠিতে মূলত তিনটি বিষয়ে আলোচনার কথা বলেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা–
১) সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে রাজ্য যে রিভিউ পিটিশন করেছে, তাতে কোন কোন পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে?
২) সুপ্রিম কোর্ট যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছিল, তা কোন পর্যায়ে রয়েছে?
৩) যদি কোনও ভাবে পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এই চাকরিহারাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর কী উপায় থাকতে পারে?
এদিকে আবার চাকরিহারারা বিকাশ ভবন চত্বর থেকে উঠে যাওয়ার পর তাঁদের ধর্নার জন্য বিধাননগর পুরসভার নতুন ছাউনি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেন্ট্রাল পার্কে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছাউনি বাধার কাজ শুরু করেছে পুরসভা। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ধর্নার জন্য পুরসভা যে জায়গায় ছাউনি বাঁধছে, তাতে তাঁরা খুশি নন। চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, পুলিশ যে জায়গা দেখিয়েছিল, পুরসভা সেখানে ছাউনি বাঁধেনি।
আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁদের দাবি, পুলিশের তরফ থেকে যে তিনটি জায়গা দেখানো হয়েছিল, তার মধ্যে বেছে নেওয়া জায়গায় ছাউনি করা হচ্ছে না। সেই জায়গায় ছাউনি না করে বেশ খানিকটা দূরে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জায়গাটি ছোট এবং অস্বাস্থ্যকর। তাঁরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে ঠিক করবেন, পুরসভার তৈরি করা এই ছাউনিতে যাবেন কি না। ওই স্থান ২০০ জন বসার জন্য উপযুক্ত নয়।
উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে বিকাশ ভবন থেকে সেন্ট্রাল পার্কের সামনে সরে যেতে রাজি হন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শুক্রবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সেন্ট্রাল পার্কের সামনে চাকরিহারাদের কর্মসূচির অনুমতি দেন। তবে তিনি এ-ও জানান, একসঙ্গে ২০০ লোক নিয়ে কর্মসূচি করা যাবে। অদলবদল করে জমায়েত হবে। আন্দোলকারীদের ১০ জন প্রতিনিধির নাম পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। তার পরেই পুলিশের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরসভাকে চিঠি দিয়ে ছাউনি, জল, শৌচালয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ। রবিবার সকাল থেকেই পুরসভার তরফে সেন্ট্রাল পার্কের একটি জায়গায় ছাউনি তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। আনা হয়েছে বায়োটয়লেটও।