• বর্ষায় নদী ভাঙন, বাঁধের উপর নজরদারিতে ১২টি কিউআরটি
    বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বর্ষায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে সেচদপ্তরকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই নির্দেশের পরই উত্তরের চার জেলা জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও দার্জিলিংয়ের শিলিগুড়ি মহকুমার জন্য ১২টি ক্যুইক রেসপন্স টিম গড়ল সেচদপ্তর। বর্ষায় নদী ভাঙন রুখতে ও বাঁধগুলির উপর দিন-রাত নজরদারি চালাতে ওই টিম গড়া হয়েছে। প্রয়োজনে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে তারা। শুধু এলাকায় পৌঁছে যাওয়া নয়, সঙ্গে সঙ্গে যাতে নদী ভাঙন কিংবা বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করে দেওয়া যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ইতিমধ্যেই মজুত করে ফেলা হয়েছে একাধিক জায়গায়। সিকিম কিংবা ভুটান পাহাড়ে বেশি বৃষ্টি হলে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেকথা মাথায় রেখে আগাম সবরকম প্রস্তুতিও সেরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেচদপ্তরের উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক। তবে সিকিমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ঠিকমতো জানা গেলেও ভুটান পাহাড়ে রেইনগেজের (বৃষ্টিপাত পরিমাপের যন্ত্র) সংখ্যা খুবই কম। ফলে ভুটানের নদীগুলি থেকে কতটা পরিমাণ জল ডুয়ার্সে নেমে আসতে পারে, তা ঠিকমতো জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। 

    ডুয়ার্সে বর্তমানে যেসব নদী রয়েছে, তার প্রায় সবগুলিই ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা। ফলে ভুটানে বেশি বৃষ্টি হলে ওইসব নদী সেই জল বহন করে নিয়ে এসে ডুয়ার্সে জমা করে। স্বাভাবিকভাবে প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেকারণে ভুটান পাহাড়ে কত পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, কোন নদী দিয়ে কতটা জল নেমে আসতে পারে, সে ব্যাপারে নিয়মিত তথ্য পাওয়া দরকার বাংলার। কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র জলঢাকা, তোর্সা ও সঙ্কোশ নদীর ক্যাচমেন্টে (উৎসমুখে) বসানো চারটি রেইনগেজ থেকে ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জানতে পারে রাজ্যের সেচদপ্তর। এর বাইরে অনেক নদী রয়েছে, যেগুলি ভুটান পাহাড় থেকে নেমে এসে ডুয়ার্সের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, পানা, বাসরা, রেতি, সুকৃতি ও ডায়না। কিন্তু ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টিপাতের কারণে ওইসব নদী দিয়ে কতটা জল নামতে পারে, তা জানতে পারে না বাংলা। 

    সেচদপ্তরের উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, গত ১৪-১৫ মে ভুটানের পারোতে জয়েন্ট গ্রুপ অব এক্সপার্ট কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমাদেরও দুই প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। ভুটানকে বারবার বলা হচ্ছে, রেইনগেজের সংখ্যা বাড়াতে। তা না হলে ওই দেশের পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলি দিয়ে কতটা পরিমাণ জল ডুয়ার্সে এসে পড়তে পারে, তা জানা সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নিতে পারছি না আমরা। 

    বর্তমানে সিকিমে ৩০টি রেইনগেজ থেকে সেখানকার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জানতে পারে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন। তাদের কাছ থেকে তথ্য পায় রাজ্যের সেচদপ্তর। ডুয়ার্সে সবমিলিয়ে প্রায় ৬০টি রেইনগেজ বসানো আছে। এরমধ্যে সেচদপ্তরের নিজস্ব রেইনগেজ রয়েছে ১০টি। ফলে পাহাড়ে কোথায় কতটা বৃষ্টি হচ্ছে, এর জেরে কোন নদীতে কতটা জল বাড়তে পারে, তা জানতে পারে সেচদপ্তর। কিন্তু ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলির ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হচ্ছে না।
  • Link to this news (বর্তমান)