শুধু প্রতারণা নয়, মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন চালাত ধৃত আলবেরুণী, শিলিগুড়িতে নয়া গ্যাং খোলার ছক ছিল হলদিবাড়ির পাচারকারীর
বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও সংবাদদাতা, হলদিবাড়ি: এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হলদিবাড়ি থেকে ধৃত ভুয়ো অফিসার আলবেরুণী সরকারের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে এমনই বক্তব্য শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের। ইতিমধ্যে তারা ধৃতের কার্যকলাপ নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ পেয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, প্রায় আট বছর ধরে অপরাধ জগতে ঘুরছে ধৃত। শুধু প্রতারণা নয়, সে মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন, ব্ল্যাকমেল, পাচারের ঘটনাতেও জড়িত। কিছু যুবক যুবতীকে নিয়ে সে শিলিগুড়িতে প্রতারণার নয়া গ্যাং খোলার ছক কষেছিল বলে সন্দেহ।
শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিস কমিশনার (পশ্চিম) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ধৃতের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ঘটনার সমস্ত দিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ধৃতের দুই সাগরেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা জানার চেষ্টা চলছে।
ছ’দিন আগে শিলিগুড়ির এক শিক্ষিকার সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে হলদিবাড়ি থেকে অভিযুক্ত আলবেরুণীকে পাকড়াও করে প্রধাননগর থানার পুলিস। আইএএস অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সে ওই শিক্ষিকাকে প্রতারণা করে বলে অভিযোগ। পুলিস ধৃতের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে বন্যপ্রাণী তক্ষক পাচারের চেষ্টার অভিযোগে ভুয়ো অফিসারকে পাকড়াও করেছিল বনদপ্তর। সেই ঘটনার মধ্য দিয়ে সে অপরাধ জগতে পা দেয়। এরপর ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিয়ে সে এক নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন করে শ্রীঘরে গিয়েছিল। ২০১৮ সালে নিজের পরিচয় গোপন করে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক যুবতীর উপর অত্যাচার চালায়।
ঘটনাগুলি পর্যালোচনার পর পুলিসের বক্তব্য, ধৃত যুবক হ্যাবিচুয়াল অফেন্ডার। বিবাহিত হলেও ধৃতের সফ্ট টার্গেট মেয়েরা। আইএএস, আইপিএস, সিবিআই অফিসার, ‘র’ এজেন্ট, ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিয়ে মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসাত। এরপর বিভিন্ন অছিলায় টোপ গেলা মহিলাদের কাছ থেকে টাকা তোলাই ছিল ধৃতের উদ্দেশ্য। তাতে রাজি না হলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি নিয়ে মেয়েদেরকে ব্ল্যাকমেল করত।
প্রসঙ্গত, শিক্ষিকার কাছ থেকে ৪২ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে ১৮ মে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে শিলিগুড়িকে ভরকেন্দ্র করে নয়া গ্যাং তৈরির ছক কষেছিল বলেই পুলিসের সন্দেহ। পুলিস সূত্রের খবর, অশোক স্তম্ভের ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছে সে। সেই সব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সে যুবতীদের ফাঁদে ফেলত। মাঝেমধ্যেই হলদিবাড়ি থেকে শিলিগুড়িতে আসত। সম্ভবত সে শিলিগুড়ি ও মেখলিগঞ্জের যুবক যুবতীদের নিয়ে নয়া গ্যাং তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের দুই সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ধৃত ও তার সাগরেদদের পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেগুলিতেই প্রতারণার টাকা লেনদেন করা হয়েছিল।
হলদিবাড়ির হেমকুমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর সরকার পাড়ায় ধৃতের বাড়ি। গ্রামবাসীরা বলেন, গ্রামে সে ব্যবসায়ী পরিচয় দিত। সে যে অপরাধ কাজের সঙ্গে জড়িত তা বোঝাই যেত না। ধৃতের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।