• মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের চারদিন পরও বড় দু’শহরে দিতে হচ্ছে জঞ্জাল কর
    বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: ‘জঞ্জাল কর’ আদায় অব্যাহত! চার দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঞ্জাল কর না চাপানোর বার্তা দেন। তা সত্ত্বেও জঞ্জাল কর প্রত্যাহারে নারাজ পুরসভাগুলি। শিলিগুড়িতে বাড়ি প্রতি মাসে জঞ্জাল কর আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা করে। ইংলিশবাজারে সেই করের পরিমাণ মাসিক ৩০ টাকা। কোথাও কোথাও বিনা রসিদে মাসে জঞ্জার কর বাবদ ৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। নাগরিকরা এনিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাঁদের একাংশ পুরসভার ভূমিকা নিয়ে তুলেছেন প্রশ্ন। যদিও সংশ্লিষ্ট দু’টি পুরসভার দাবি, মুখ্যমন্ত্রী জঞ্জালের সার্ভিস চার্জ নিয়ে কোনও কিছু বলেননি। তারা শহরের উন্নয়নে নিয়ম মেনেই সেই চার্জ নিচ্ছে। 

    সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে এসে কোচবিহার পুরসভার বিরুদ্ধে জঞ্জাল কর নিয়ে এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ পান মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার তিনি মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে এ ব্যাপারে পুরসভাগুলিকে সতর্ক করেন। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, জঞ্জাল সাফাই, মিউটেশনের নামে পুরসভাগুলি নাগরিকদের উপর কর চাপাতে পারবে না। সরকারের অনুমতি ছাড়া তারা কোনওরকম ট্যাক্স বাড়াতে পারবে না। 

    রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের ওই বার্তার চার দিন পরও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ। জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য শিলিগুড়ি শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডে প্রতিটি বাড়ি থেকে মাসে ১০ টাকা করে আদায় করছে পুরসভা। এজন্য সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির নামে রসিদও দেওয়া হচ্ছে। এরবাইরে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু জায়গায় বাড়ি থেকে বিনা রসিদে জঞ্জাল সাফাই বাবদ মাসে ৪০-৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। নাগরিকদের একাংশের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে পুরসভা জঞ্জাল কর নিয়ে যাচ্ছে। 

    শিলিগুড়ি পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ ও সাফাই বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য মানিক দে অবশ্য বলেন, আমরা জঞ্জাল সাফাই পরিষেবা চার্জ বাড়াইনি। পুরসভার সিদ্ধান্ত অনুসারেই চার্জ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজেশপ্রসাদ শা বলেন, রসিদ ছাড়া অতিরিক্ত জঞ্জাল সাফাই সার্ভিস চার্জ আদায়ের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব। তবে এ বিষয়ে নাগরিকদের সতর্ক হতে হবে। রসিদ ছাড়া কেউ ওই চার্জ প্রদান করবেন না। 

    এদিকে, ইংলিশবাজার শহরে জঞ্জাল সাফাই চার্জের পরিমাণ মাসে ৩০ টাকা। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের ৩০টি ওয়ার্ডে বাড়ি সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। বেশকিছু বাজার রয়েছে। দৈনিক বিপুল পরিমাণ জঞ্জাল সংগ্রহ করা হয়। এজন্য ৫৫টি গাড়ি রয়েছে। সেগুলির চালকদের বেতন, জ্বালানির টাকা সব কিছু পুরসভাকে প্রদান করতে হয়। এজন্যই দৈনিক এক টাকা হিসেবে মাসে বাড়ি পিছু ৩০ টাকা করে জঞ্জাল সাফাই চার্জ নেওয়া হয়। এখন শহরের জঞ্জাল মজুত করা হচ্ছে কাঞ্চনটারে। সেগুলি প্রক্রিয়াকরণের জন্য বাহাদুরপুরে ম্যানেজমেন্ট ইউনিট গড়া হচ্ছে। 

    ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী অবশ্য বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করেছে। রাজ্যের নির্দেশে সেই চার্জ অনেকটাই কমিয়ে নাগরিকদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে। এটা নেওয়া যাবে না, তা মুখ্যমন্ত্রী বলেননি। তিনি রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া নতুন করে কর লাগু না করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই বক্তব্যর ভুল ব্যাখ্যা করছেন অনেকে।
  • Link to this news (বর্তমান)