• শিলিগুড়ি পুরসভার ৭৫ বছর পরও চালু হয়নি এলআর ম্যাপ, জমি মাফিয়াদের দাপট অব্যাহত
    বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: তিন বছর আগে চালু হয়েছে ল্যান্ড রিফর্মস (এলআর) পর্চা বা রেকর্ড। কিন্তু এখনও প্রকাশিত হয়নি এলআর ম্যাপ। এনিয়ে ক্ষুব্ধ ৭৫ বছরের পুরনো শিলিগুড়ি শহরের নাগরিকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের একাংশের উদাসীনতায় সেই ম্যাপ চালু হয়নি। যার জেরে এখানে সক্রিয় ল্যান্ড মাফিয়ারা। যদিও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকররা অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, শহরে খাস জমি উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। দু’দিন আগে মাল্লাগুড়িতে ২৭ ডেসিমেল খাস জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। 

    দীর্ঘদিন আগেই রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় আরএস রেকর্ড বিলুপ্ত হয়ে চালু হয়েছে এলআর রেকর্ড। কিন্তু মাত্র তিন বছর আগে শিলিগুড়ি শহরের এলআর রেকর্ড তৈরি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৬ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে ২০২১ সালে চালু করা হয় এলআর রেকর্ড। আরএস রেকর্ড অনুসারে শিলিগুড়িতে মৌজার সংখ্যা ছিল তিনটি। শিলিগুড়ি, মাল্লাগুড়ি ও ঘোকমা। সেগুলি জেএল নম্বর ছিল, যথাক্রামে ১১০, ১০৭ ও ৮৭। এলআর রেডর্কে শিলিগুড়ি মৌজা ভেঙেই তৈরি হয়েছে ছ’টি নতুন মৌজা। যথাক্রমে শিলিগুড়ি মধ্য, শিলিগুড়ি উত্তর-পশ্চিম, শিলিগুড়ি মধ্য-পশ্চিম, শিলিগুড়ি দক্ষিণ-১, শিলিগুড়ি পূর্ব এবং শিলিগুড়ি দক্ষিণ-২। এরবাইরে মাল্লাগুড়ি ও ঘোকমা মৌজা রয়েছে। শহরের সংযোজিত এলাকা বাদ দিয়ে পুরসভার ৩৩টি ওয়ার্ডে মৌজার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটটি। 

    শিলিগুড়ি মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকররা জানান, ছ’বছর ধরে দফায় দফায় সার্ভে, খসড়া রেকর্ড প্রকাশ, হেয়ারিং চালিয়ে এলআর রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে। 

    অথচ এখনও পর্যন্ত এলআর ম্যাপ চালু হয়নি। শহরের নাগরিকরা বলেন, শিলিগুড়ি পুরসভা গঠিত হওয়ার ৭২ বছর পর রিভিশনাল সেটেলমেন্ট বা আরএস পর্চা পরিবর্তন করে করা হয়েছে এলআর রেকর্ড। তাও তৈরি করতে ছ’বছর সময় লেগেছে। সংশ্লিষ্ট ম্যাপ প্রকাশিত না হওয়ায় মিলছে না জমি ও বাড়ির মানচিত্র। তাঁদের অভিযোগ, ৭৫ বছর অতিক্রম করেছে পুরসভা। এখন সেই ম্যাপ প্রকাশ হতে কত সময় লাগবে বুঝতে পারছি না। 

    শিলিগুড়ি মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক টিনা ডুকপা অবশ্য বলেন, এলআর রেকর্ড তৈরি করে সমস্ত তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই ডিজিটাল এলআর ম্যাপ প্রকাশিত হবে বলেই আশা করছি। এ ব্যাপারে সরকারি স্তরে প্রক্রিয়া চলছে। 

    এদিকে, এই শহরে জমির বেআইনি কারবার অব্যাহত। নাগরিকদের অভিযোগ, এলআর ম্যাপ না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে ল্যান্ড মাফিয়ারা। বিভিন্ন উপায়ে খাস এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে বিক্রি করা হচ্ছে। ভূমিদপ্তরের একাংশের উদাসীনতায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

    মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকরা অবশ্য বলেন, দু’দিন আগেই মাল্লাগুড়িতে ২৭ ডেসিমেল একটি খাস জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। 

    যারমধ্যে প্রায় ১৩ ডেমিসেল একটি গ্যারাজের দখলে রয়েছে। গ্যারেজ কর্তৃপক্ষ লিজের জন্য আবেদন করেছে। এনিয়ে শহরে বেশকিছু খাস জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। কাজেই উদাসীনতার অভিযোগ ঠিক নয়। 
  • Link to this news (বর্তমান)