বিজ্ঞানীদের থেকে হাতেকলমে টেলিস্কোপ তৈরি শিখতে শিবির
বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, ঘাটাল: আজ সোমবার দাসপুর থানার সীতাপুরে শুরু হচ্ছে রাজ্যের এক অভিনব বিজ্ঞান শিবির, যা পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। এই প্রথম রাজ্যের ৪০০ পড়ুয়া হাতে-কলমে টেলিস্কোপ তৈরির সুযোগ পাচ্ছে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে। কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের প্রতিষ্ঠাতা তথা বিজ্ঞানী অধ্যাপক সন্দীপ চক্রবর্তী জানালেন, ‘এ ধরনের ক্যাম্প পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমগ্র শিক্ষা মিশনের আর্থিক সহায়তায় আয়োজিত এই শিবিরে, পড়ুয়ারা কেবল বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক জ্ঞানই অর্জন করবে না বরং নিজেদের হাতে তৈরি করবে কার্যকরী টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তারা রাতের আকাশে চাঁদ, মঙ্গল, শুক্র-সহ বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ চিহ্নিত করাও শিখবে। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে রাজ্যের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
দাসপুর থানার সীতাপুরে আইনোসফেরিক অ্যান্ড আর্থ কোয়েক রিসার্চ সেন্টার অ্যান্ড অপটিক্যাল অবজারভেটরি(আই.ই.আর.সি.ও.ও) রয়েছে। সেখানেই আজ থেকে ওই শিবিরটি শুরু হচ্ছে। রাজ্যের এই প্রথম আবাসিক ক্যাম্পে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুর এই চার জেলার ৩২টি স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির ৪০০ ছাত্রছাত্রী এবং আট জন শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন।
কী থাকছে শিবিরে? এই ১২ দিনের ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীদের শুধুই তত্ত্বগত পাঠ দেওয়া হবে না। তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে লেন্স, পাইপ, মাউন্টিং সরঞ্জাম, হোল্ডার ইত্যাদি উপাদান। যার মাধ্যমে তারা নিজেরাই একটি পাঁচ ইঞ্চি ব্যাসের এবং সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা পূর্ণাঙ্গ রিফ্রেক্টর টেলিস্কোপ তৈরি করবে। যার ওজন হবে ১০ কেজির উপরে। সন্দীপবাবু বলেন, প্রত্যেক স্কুলের পড়ুয়ারা একটি করে ওই ধরনের টেলিস্কোপ তৈরি করে সেটা তার স্কুলে নিয়ে যেতে পারবে। ওই টেলিস্কোপের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে স্কুল বহু কিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। পড়ুয়াদের শেখাতে পারবে। এর জন্য রাজ্যের সমগ্র মিশন তিন লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা দিয়েছে বলে সন্দীপবাবু জানান।
ওই শিবিরে পাশাপাশি শেখানো হবে কিভাবে দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে রাতের আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করতে হয়, কোন কোন তারকামণ্ডলী কোন ঋতুতে দেখা যায়, কিভাবে একটি টেলিস্কোপ অ্যালাইন ও ক্যালিব্রেট করা হয়। সেই সঙ্গে থাকছে লেন্স ও প্রতিচ্ছবির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাকাশবিজ্ঞান, নক্ষত্র চেনা ও রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ, টেলিস্কোপের ইতিহাস ও বিবর্তন স্কুলপড়ুয়াদের নিজস্ব বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট উপস্থাপনার মতো নানা বিষয়ের উপর কর্মশালা।
প্রশিক্ষকদের মধ্যে থাকবেন কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের সহকারী দুই অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী তমাল বসাক, দেবেন্দ্র বিস্ত, চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস ভৌমিক সহ বেশ কয়েক জন সায়েন্টিস্ট ও জুনিয়র সায়েন্টিস্ট। তাঁরা আন্তর্জাতিক স্তরের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অভিজ্ঞতা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। তাঁরা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল শুধু বইয়ের পাতায় আটকে না থেকে শিশুদের বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে শেখার সুযোগ করে দেওয়া। যাতে তারা নিজেরা কল্পনা করতে শেখে, নিজের হাতে কিছু তৈরি করতে শেখে।
স্থানীয় এক হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা সীতাপুর আই.ই.আর.সি.ও.ও’র সহসভাপতি সুব্রত বুড়াই বলেন, এই ক্যাম্প শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি তৈরি শেখা নয়, এটি ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস, কল্পনাশক্তি এবং বাস্তব জীবনের দক্ষতা গড়ে তোলার সোপান হিসেবে কাজ করবে।-নিজস্ব চিত্র