• কাটোয়ার ভাগীরথীতে ফের উদ্ধার এক শিশু ডলফিনের দেহ, হচ্ছে ময়নাতদন্ত
    বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: কাটোয়ায় একের পর এক গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যু ঘটছে। রবিবার কাটোয়ায় ভাগীরথী থেকে আবার এক শিশু ডলফিনের মৃতদেহ উদ্ধার করল বনদপ্তর। কয়েকদিন আগেও ডলফিনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। তবে এবারে শিশু ডলফিনের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ায় চিন্তায় বনকর্মীরা। ময়নাতদন্ত করা হবে ডলফিনের। কাটোয়া বনদপ্তরের রেঞ্জার শিবপ্রসাদ সিনহা বলেন, একটি শিশু ডলফিনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। দেহটি ময়নাতদন্ত করা হবে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এদিন সকালে কাটোয়া শ্মশানঘাট এলাকা থেকে কিছুটা দূরেই গোবিন্দপুর এলাকায় ডলফিনটিকে মৃত অবস্থায় ভাসতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরাই বনদপ্তরকে খবর দেন। পরে বনকর্মীরা সেটির দেহ উদ্ধার করে আনেন। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে কাটোয়া শহরের ভাগীরথীর কাশীগঞ্জ ঘাট একটি পূর্ণবয়স্ক গাঙ্গেয় ডলফিনের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার করে বনদপ্তর। সেটির মুখে মাছ ধরার জালের টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া গত ডিসেম্বর মাসে ১০ দিনের ব্যবধানে দু’টি ডলফিনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল কাটোয়ার ভাগীরথী থেকে। এরমধ্যে একটি ডলফিন ছিল পূর্ণবয়স্ক, অন্যটি শিশু। কাটোয়ার ভাগীরথীতে কল্যাণপুর থেকে পাটুলি পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিমি এলাকা জুড়ে ডলফিনের বিচরণ ক্ষেত্র।  কয়েক বছর আগে ঘটা করে কাটোয়ার শাঁখাই ঘাটে গাঙ্গেয় ডলফিন সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল রাজ্য বনদপ্তর। ডলফিন নিয়ে গবেষণাও চালাচ্ছে বনদপ্তর।  তবুও ডলফিনের মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। এই এলাকায় ৩২ থেকে ৩৫টির বেশি  গাঙ্গেয় ডলফিন রয়েছে। 

    ডলফিনের মৃত্যু রুখতে ও জলজ জীববৈচিত্র্য নিয়ে রাজ্য বনদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে ওয়ার্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড (ডব্লুডব্লুএফ-ভারত শাখা) সুন্দরবন প্রোগ্রামের গবেষকরা। তাঁরা এর আগে ভাগীরথীতে লঞ্চে করে নামখানা থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত যান। তারপর আবার তাঁরা কাটোয়ার শাঁখাই হয়ে ফিরে যান। গবেষকদের মধ্যে ছিলেন সংস্থার সুন্দরবন প্রোগ্রামের ডিরেক্টর অনুরাগ দণ্ড, ডলফিন বিশেষজ্ঞ ডঃ শাহানাওয়াজ, গবেষক মৃদুলকান্তি কর সহ বিশিষ্টরা। তাঁরা ফরাক্কা পর্যন্ত ডলফিনের গতিবিধিতে নজরদারি চালান। পাশাপাশি ডলফিনের আচরণ সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করেন। ডলফিন সুরক্ষায় ভাগীরথী কতটা নিরাপদ, তাও তাঁরা দেখেন। পাশাপাশি পিঙ্গার যন্ত্র নিয়েও গবেষণা চালান। পিঙ্গার যন্ত্রের আলট্রা সাউন্ড গাঙ্গেয় ডলফিন পছন্দ করে না। তাই গবেষকদের দাবি, ওই যন্ত্র মৎস্যজীবীদের জালে লাগিয়ে দিতে হবে। তাতে দু’পাশের ১০০ মিটার দূর থেকে ডলফিন জালের অবস্থান বুঝতে পারবে। তাই ডলফিন ওই জালের ধারে কাছে আসবে না। সেই কারণেই কয়েকটি পিঙ্গার যন্ত্র জালে লাগিয়ে গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখছেন। সফল হলে ওই যন্ত্র ডলফিনের মৃত্যু রুখতে ব্যবহার করা হবে। 

    পরিবেশ কর্মীদের একাংশ জানান, কাটোয়ায় ডলফিনের মৃত্যু মিছিল চলছে। জলজ জীব বৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে নদীকে দূষণমুক্ত করতে হবে। গাঙ্গেয় ডলফিনকে তার বাসোপযোগী করে তুলতে হবে। ভাগীরথীতে কয়েকটি জোনে যে পরিমাণ ডলফিন দেখা গিয়েছে, তা মোটেই সন্তোষজনক নয়।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)