দুই কিশোরীকে বাঁচাতে গঙ্গায় ঝাঁপ, নিখোঁজ কিশোর, মর্মান্তিক ঘটনা শ্রীরামপুরে, সন্ধ্যায় উদ্ধার নাবালিকাদের মৃতদেহ
বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: গঙ্গায় ডুবন্ত দুই কিশোরীকে বাঁচাতে গিয়ে তাদের সঙ্গেই তলিয়ে গেল এক কিশোর। রবিবার শ্রীরামপুরের সুরকিঘাটে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। প্রায় চার ঘণ্টা পর দুই কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু এদিন রাত পর্যন্ত ওই কিশোরের হদিশ মেলেনি। এই ঘটনায় গঙ্গাপাড়ে তীব্র আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, হুগলিতে গঙ্গায় মৃত্যু মিছিল নিয়ে নানা মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, তলিয়ে যাওয়া দুই কিশোরীর নাম নিশা রায় (১৭) ও অঞ্জলি মাহাত (১৩)। দু’জনেই শ্রীরামপুর পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শীতলাতলার বাসিন্দা। নিশা একাদশ শ্রেণিতে পড়ত ও অঞ্জলি অষ্টমের ছাত্রী ছিল। তলিয়ে যাওয়া নিখোঁজ কিশোরের নাম রোহন প্রসাদ। বছর ষোলোর রোহন সুরকিপাড়া ঘাট এলাকারই বাসিন্দা। সুরকিঘাটের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, নিশা ও অঞ্জলির সঙ্গে আরও এক নাবালিকা এদিন গঙ্গায় স্নান করতে নেমেছিল। দুপুরে সেই সময় জোয়ার ছিল গঙ্গায়। তাতেই তিনজন ভেসে যায়। এক নাবালিকা গঙ্গার ঘাটের একটি পিলার ধরে কোনওমতে নিজেকে বাঁচাতে পারলেও বাকি দু’জন তলিয়ে যায়। গঙ্গার পাড়ে সেই সময় বসেছিল রোহন। ওই দৃশ্য দেখা মাত্র সে ঝাঁপ দেয় জলে। কিন্তু জলের টান এতটাই তীব্র ছিল যে, তিনজনই ভেসে যায়। রোহনের বাবা স্থানীয় একটি মিলের শ্রমিক। তিনি বলেন, দুপুরে কিছু জিনিস আনতে ওকে দোকানে পাঠিয়েছিলাম। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ায় ছেলের খোঁজ করতে গিয়ে শুনি, রোহন গঙ্গায় ভেসে গিয়েছে। ও এদিন বাড়িতেই ছিল। আমিই জোর করে দোকানে পাঠিয়েছিলাম। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মাঝবয়সি এই মিল শ্রমিক। স্থানীয় কাউন্সিলার শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, দুই কিশোরীর পরিবারই নিম্ন মধ্যবিত্ত। বাড়িতে না জানিয়েই তারা দুপুরে আরেক বান্ধবীকে নিয়ে গঙ্গায় স্নান করতে গিয়েছিল। তখন জোয়ারের টান থাকায় বিপত্তি হয়। একজন বেঁচে গেলেও দু’জন তলিয়ে যায়। পরে তাদের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনার পরপরই বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের টিম গঙ্গায় তল্লাশিতে নামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যার দিকে সুরকিঘাট লাগোয়া একটি বাঁক থেকে দুই কিশোরীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, গত বছরের পাশাপাশি চলতি বছরেও গঙ্গায় তলিয়ে মৃত্যুর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। উত্তরপাড়া, কোন্নগর, শ্রীরামপুরেই মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।