ড্রোনের নজরে গৌড়েশ্বর নদীর ‘জিরো পয়েন্ট’!, আশঙ্কায় স্থানীয়রা
বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত ও সংবাদদাতা, বসিরহাট: বাংলাদেশের দিক থেকে তিনটি ড্রোন উড়ে এল ভারতের আকাশে। তারপর সেগুলি আবার ফিরে যায় ওপারে। শুক্রবার রাতে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছেন হাসনাবাদ-হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দারা। তা দেখে আতঙ্কে শনিবার রাতেও দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি গ্রামবাসীরা। কিন্তু শুধু কাটাখালি সেতুর উপরেই ঘুরপাক খেল কেন ড্রোন? এই এলাকাটি ‘জিরো পয়েন্ট’ বলে পরিচিত। তাহলে কি গৌড়েশ্বর ও ডাঁসা নদী সংলগ্ন এলাকার ছবি নেওয়াই ‘লক্ষ্য’ ছিল? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে।
এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় বেড়েছে পুলিস ও বিএসএফের নজরদারি। দূরবীণে প্রতিনিয়ত চোখ রাখছেন অফিসাররা। শুক্রবার রাতে হাসনাবাদে কাটাখালি সেতু লাগোয়া এলাকায় তিনটি ড্রোনকে উড়তে দেখা যায়। কিছুক্ষণ বাদে সেগুলিকে বাংলাদেশের দিকে আবার চলে যেতেও দেখা যায় বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। পুলিস ও বিএসএফের উচ্চপদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। ডাঁসা নদীর উপর কাটাখালি সেতু। উত্তরে বরুণহাট, দক্ষিণে কাটাখালি। এই সেতু হাসনাবাদ এবং হিঙ্গলগঞ্জকে জুড়েছে। সেখান থেকে হাত বাড়ালেই বাংলাদেশ। গৌড়েশ্বর নদী এখানে ‘জিরো পয়েন্ট’। স্থানীয়দের দাবি, ভাটার সময় নদীতে জলস্তর নেমে গেলে সেই সুযোগে অবৈধ কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাহলে কি এই সেতু বা নদী এলাকা বাংলাদেশিদের ‘সফট’ টার্গেট? উল্লেখ্য, সীমান্তের বাংলাদেশ প্রান্তে জেএমবি’র পাশাপাশি ফের সক্রিয় হয়েছে এবিটি’র মতো জঙ্গি সংগঠন। ড্রোনের টহলদারির পিছনে কি তারাই? তাদের আসল উদ্দেশ্য ‘সেফ প্যাসেজ’ খুঁজে জঙ্গি অনুপ্রবেশ করানো। এই প্রশ্নকে ঘিরেই এখন চর্চা গোটা এলাকায়। এখানে বিএসএফের দু’টি ক্যাম্প রয়েছে। তাসত্ত্বেও তাদের নজর এড়িয়ে কীভাবে ড্রোন এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। একরাশ আতঙ্ক নিয়েই দিন কাটালেন বাসিন্দারা।
শনিবার সন্ধ্যায় কেউ বাড়ির উঠোনে, কেউ কাটাখালি সেতুর উপর এসে বসেন। আবার যদি বাংলাদেশি ড্রোন আসে! অনেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তাকিয়ে ছিলেন আকাশের দিকে। গৌড়েশ্বর নদীর দিকেও নজর ছিল গ্রামবাসীদের। এই সুযোগে যদি দুর্বৃত্তরা এপারে চলে আসে, সেদিকে নজর রাখছিলেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা তথা শিক্ষক রাজেশ লস্কর বলেন, ‘পাকিস্তানের বন্ধু বাংলাদেশ। তাই ড্রোন পাঠিয়েছিল তারা। তারপর থেকেই আমরা আতঙ্কে আছি। শনিবারও ঘুম আসেনি।’ সেতু লাগোয়া ব্যবসায়ী শওকত আলির কথায়, ‘এখান থেকে হাত বাড়ালেই বাংলাদেশ। তাদের ড্রোন আমাদের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে।’ এই ঘটনার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বসিরহাট, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ জুড়ে বিএসএফ এবং পুলিসের নজরদারি আরও কড়া হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় আপাতত ড্রোনের ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে পুলিস। এলাকায় কতগুলি ড্রোন আছে, সেই তথ্য পুলিস সংগ্রহ করবে। বসিরহাট পুলিস জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, ‘সীমান্তে ড্রোন ওড়ানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’