বিশ্বভারতীর নাম ভাঙিয়ে উপার্জনের দিন শেষ, নিতে হবে আগাম অনুমতি
বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: এবার বিশ্বভারতীর নাম ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে উপার্জন করার দিন শেষ। বিশ্বভারতীর নাম ব্যবহার করলে নিতে হবে অনুমতি। সঙ্গীত ভবন, কলাভবনকে এমনই বার্তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর নাম ব্যবহার করে অনেক অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাকুশলীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কর্মশালা, প্রদর্শনী আয়োজন করে আসছিলেন বলে অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে অনুষ্ঠান করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও, বিশ্বভারতীর ভাঁড়ারে এযাবৎ কোনও টাকাই ঢোকেনি। অথচ শান্তিনিকেতনের বাইরে বেরিয়ে বিশ্বভারতীর নাম করে কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসতেই একটি বৈঠক ডেকে কড়া ব্যবস্থা নিলেন উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ। তার প্রেক্ষিতে এই দু’টি বিভাগকে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিল্পচর্চা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান রবীন্দ্র ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতী। এই বিষয়ে কলকাতা সহ রাজ্য তো বটেই, দেশ-বিদেশেও বিশ্বভারতীর শিল্পী-অধ্যাপকদের আলাদা কদর রয়েছে। শান্তিনিকেতনের শিল্পচর্চা, নৃত্যশৈলীর খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। বিশ্বভারতী ঘরানার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শিল্প প্রদর্শনী দেখতে শান্তিনিকেতনে দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় হয়। সেই শিল্পীরাই যখন বাইরে শিল্প ও সংস্কৃতি প্রদর্শনী তুলে ধরেন তা দেখতে টিকিট কেটেও মানুষ ভিড় জমান। সেই সুযোগকেই বেশকিছু অধ্যাপক, শিল্পী ও কলাকুশলীরা কাজে লাগাচ্ছিলেন। মোটা বেতন নেওয়ার পরেও সঙ্গীত ভবনের বেশকিছু অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে কলকাতা, বেঙ্গালুরু, দিল্লি সহ দেশের নানাপ্রান্তে অনুষ্ঠান করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছেন বলে অভিযোগ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সঙ্গীত ভবনের পড়ুয়াদের দিয়ে এই অনুষ্ঠান করানো হলেও তাঁদের এযাবৎ কোনও পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, এমনটাই দাবি। পড়ুয়ারা জানান, বাইরে অনুষ্ঠান করতে গেলেও নৃত্যশিল্পীদের পোশাক, মেকআপ, খাওয়া-দাওয়া নিজের খরচায় করতে হয়। অথচ যে অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠান হয়, তাঁর পকেটেই সমস্ত টাকা ঢোকে। সব জেনেও নম্বর কাটার ভয়ে চুপ থাকতে হয়।
বিষয়টি নজরে আসতেই বৈঠক করে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বভারতীর ব্র্যান্ডে কোনও ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক বা কর্মী অন্য কোনও সংস্থার জন্য অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী পরিবেশন করতে পারবেন না। বিশ্বভারতীর বাইরের অনুষ্ঠানে কোনও অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করতে চাইলে কর্তৃপক্ষের কাছে আগাম অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি, তাঁরা ওই অনুষ্ঠানে উপার্জিত টাকার একটা অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্বে জমা করতে বাধ্য থাকবেন। বিশ্বভারতীকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য, বিশেষত ‘রেভিনিউ জেনারেট’ বা রাজস্ব তৈরি করাই এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য। তার প্রেক্ষিতে আগামী বৈঠকে এবিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হবে। যা বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে সাহায্য করবে।
জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, ব্র্যান্ড ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে অর্থ উপার্জন একটি অনৈতিক কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের বিষয়কে মোটেই অনুমোদন করে না। তাই উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।