ভুয়ো বাবা ও দাদা সাজিয়ে বাংলাদেশির ড্রাইভিং লাইসেন্স! পুলিসকে গাড়ির ধাক্কা, তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য
বর্তমান | ২৬ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়ল কেউটে! সাধারণ একটি দুর্ঘটনার তদন্ত করছিল পুলিস। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল অভিযুক্ত গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার সহ বিভিন্ন নথি। সেই নথিপত্র খতিয়ে দেখতে গিয়ে খটকা লাগে কালীঘাট থানার অফিসারদের। পরীক্ষায় জানা যায়, সমস্ত নথিই জাল। অভিযুক্ত চালক আজাদ শেখ আসলে বাংলাদেশি। কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে এই রাজ্যে ঢোকে সে। তারপর বাড়িওয়ালার বাবাকে নিজের বাবা সাজিয়ে তৈরি করে ফেলে একাধিক জাল ভারতীয় নথি। এই কাজে সাহায্য করে বাড়িওয়ালা স্বয়ং। এই অভিযোগে নতুন করে মামলা রুজুর পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে আজাদ ও বাড়িওয়ালা জাফর আলি শেখকে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ মে রিজেন্ট পার্ক থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনসপেক্টর (এএসআই) সুষেন দাসের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ডিউটি ছিল নিউ আলিপুর এলাকায়। সকাল ৬টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইকে করে তিনি ডিউটির জায়গায় যাচ্ছিলেন। সদানন্দ রোডের কাছে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি গাড়ি তাঁর বাইকে ধাক্কা মারে। বাইক উল্টে গিয়ে বাম পা ভাঙে সুষেনবাবুর। কোমরে এবং মুখেও আঘাত পান। বেপরোয়া গতি, ধাক্কা মারা সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তাকে গ্রেপ্তার করে কালীঘাট থানা। অভিযুক্ত চালক পুলিসকে জানায়, তার নাম আজাদ শেখ। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার সহ বিভিন্ন নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। দেখা যায়, সেসব নথিতে উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাটের ঠিকানা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত জানায়, সে ওখানে ভাড়া থাকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে জানা যায়, সব নথিই জাল। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে ভেঙে পড়ে আজাদ তদন্তকারীদের জানায়, সে আদতে বাংলাদেশি নাগরিক। ওপারেও তার নাম ছিল আজাদ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে সে বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে ভারতে ঢোকে। ওই দালালের এক পরিচিতের বাড়ি ন্যাজাটে। তার মাধ্যমে ন্যাজাটে গিয়ে বাড়ি ভাড়া নেয় আজাদ। কোনওরকম নথি যাচাই না করে তাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় বাড়িওয়ালা জাফর আলি শেখ। এরপর জাফরকে দাদা এবং তার বাবাকে নিজের বাবা সাজিয়ে জন্মের শংসাপত্র জোগাড় করে আজাদ। তার ভিত্তিতে আধার কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি হয়ে যায়। এমনকী পাসপোর্টও করে নেয় সে। তদন্তকারীররা আজাদের জালিয়াতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। আজাদ তদন্তকারীদের জানায়, গোটাটাই জানে এবং সবরকম সহযোগিতা করেছে জাফর। শনিবার রাতে ন্যাজাট এলাকা থেকে জাফরকে গ্রেপ্তার করে কালীঘাট থানা। জাফর যে সব জানত, তদন্তকারীদের কাছে স্বীকার করে সে। জানা যায়, তার বাবার মৃত্যু হয়েছে আগেই। আজাদের ভারতীয় নথি পেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য অভিযুক্তকে ভাই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নথি পেশ করে। তাই দু’জনের বাবার নাম এক রয়েছে সব নথিতে।