• অ্যানথ্রাক্সের টিকাকরণ শুরু জোরকদমে, স্ক্যানারে নেটওয়ার্ক
    এই সময় | ২৬ মে ২০২৫
  • সংক্রমণের শিকার মৃত ছাগলের মাংস খেয়ে অ্যানথ্রাক্সে মারা গিয়েছেন একই পরিবারের তিনজন। তা থেকেই প্রকাশ্যে এসেছে, গবাদি পশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স মাথাচাড়া দিয়েছে কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রামে।

    সেই সংক্রমণ যাতে গোরু-মোষ-ছাগল-ভেড়ার মধ্যে আর কোনও ভাবে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে টিকাকরণ শুরু হয়েছে ব্রহ্মোত্তর চাতরা গ্রামে।

    এ দিকে পশুর পাশাপশি মানুষেরও রক্তের নমুনা শনিবার রাতে কলকাতায় এসে পৌঁছেছে পরীক্ষার জন্য। যদিও অ্যান্টিবায়োটিক শুরু হয়ে যাওয়ায় নমুনাগুলিতে ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব আদৌ মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ী চিকিৎসকরা।

    এ দিকে, স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক ময়নাতদন্ত, কেন সংক্রমণের খবর জেলা থেকে কলকাতায় পৌঁছতে এত দেরি হলো! কারণ, দেরি না হলে বাঁচানো যেত তিনটি প্রাণ। তাই গ্রামে গ্রামে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত সরকারি ‘নেটওয়ার্ক’ মজবুত করার চেষ্টায় মরিয়া স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর।

    সরকারি সূত্রের খবর, বেলগাছিয়ায় ইনস্টিটিউট অফ অ্যানিম্যাল হেলথ অ্যান্ড ভেটেরিনারি বায়োলজিক্যালস ল্যাবের পরীক্ষায় চাতরা গ্রামের কয়েকটি খাটালের মাটির নমুনায় অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া স্পোরের অস্তিত্ব মিলেছে।

    সংক্রমণের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই বৃহস্পতিবার থেকে ওই গ্রাম এবং তার চারদিকে ১ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা গবাদি পশুদের উপরে শুরু হয়েছে টিকাকরণ। শনিবার রাত পর্যন্ত হাজার তিনেক পশুকে টিকাকরণের আওতায় আনা হয়েছে। আগামী ২৯ মের মধ্যে ১০ হাজার গবাদি পশুর টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

    প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘কমপক্ষে আগামী তিন বছর ধরে ওই এলাকায় চলবে এই টিকাকরণ। যদি এর মধ্যে ফের অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের খবর মেলে, তখন আরও তিন বছর হবে টিকাকরণ। পরবর্তী তিন বছরে যদি একটিও সংক্রমণের খবর না মেলে, একমাত্র তখনই থামবে টিকাকরণ।’

    তিনি জানান, ব্রহ্মোত্তর চাতরা গ্রাম ও তার আশপাশে ছ’টি সরকারি টিম এই টিকাকরণের কাজ করছে। পাশাপাশি ওই টিম বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকেদের বোঝাচ্ছে, কোন পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে কী ধরনের খবর পৌঁছতে হবে এবং প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে।

    তবে ওই গ্রামে হওয়া সংক্রমণের ঘটনা এপ্রিলের শেষে ঘটলেও সে সম্পর্কিত খবর অত্যন্ত দেরি করে মে মাসের মাঝামাঝি সরকারের কাছে আসা নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর, উভয়েই চিন্তিত।

    এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘একই পরিবারের দু’জনের এপ্রিলের ২২ ও ২৪ তারিখে এবং তৃতীয় জনের মে মাসের ১৪ তারিখে মৃত্যুর পরে বিষয়টি সরকারের গোচরে আনেন ওই পরিবারের আত্মীয় এক আশা কর্মী। তাই ভাবার সময় এসেছে, সরকারের নেটওয়ার্ক কেন এত দুর্বল!’

    ওই পদস্থ কর্তা জানান, অ্যানথ্রাক্স এমন একটি ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ যাতে সাধারণ পেনিসিলিন কিংবা সিপ্রোফ্লক্সাসিন অ্যান্টিবায়োটিকেই কাজ হয়ে যায়। অর্থাৎ, সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে এই তিনটি মৃত্যু স্বচ্ছন্দে আটকানো যেত।

    চিকিৎসকরা বলছেন, জ়ুনোটিক বা প্রাণিবাহিত রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধে মানুষ ও প্রাণী স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত সকলের একযোগে কাজ করা জরুরি। এখন আর মানুষের স্বাস্থ্য আর প্রাণীর স্বাস্থ্যকে আলাদা বন্ধনীতে রাখার মানে হয় না।

    এখন বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ওয়ান হেলথ’-এর ধারণাটাই যুগোপযোগী। কেননা, মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতির স্বাস্থ্য একে অন্যের উপরে নির্ভরশীল। সেজন্য সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে বাড়ি বাড়ি ভিজি়ট করছে সরকারি টিম।

  • Link to this news (এই সময়)