• ভোটার তালিকায় বৃদ্ধ ‘মৃত’, আটকে রয়েছে বার্ধক্য ভাতা
    এই সময় | ২৬ মে ২০২৫
  • এই সময়, রামপুরহাট: একেই বলে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’! ভোটার তালিকায় তিনি ‘মৃত’। শেষ কয়েক বছর ধরে বন্ধ বার্ধক্য ভাতা। কিন্তু বাস্তবে তিনি হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছেন দিব্যি।

    বীরভূমের রামপুরহাট-১ ব্লকের নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের কানাইপুর গ্রাম এমনই তাজ্জব করা ঘটনার সাক্ষী। ৭০ বছরের জীবিত বৃদ্ধের নাম ধীরেন মাল। জানা গিয়েছে, তাঁর স্ত্রী ভাসানি মাল মারা গিয়েছেন বছর কয়েক আগে।

    এ দিকে সরকারি নথিতে ‘মৃত’ ধীরেন! প্রশাসনের কলমের এক খোঁচায় ‘জীবন্মৃত’ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন ৭০ বছরের ভিক্ষুক। অনাহারে দিন কাটছে ধীরেনের। প্রশাসনের দরজায় কড়া নেড়ে ‘প্রাণ’ ফেরানোর আর্জি জানিয়ে চলেছেন প্রায়ই।

    তাঁর অভিযোগ, এত কিছুর পরেও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। জানা গিয়েছে, তাঁর স্ত্রী–র মৃত্যুর আগে পর্যন্ত দু’জনে মাসে ১০০০ টাকা করে বাধর্ক্য ভাতা পেতেন। সরকারি নিয়মানুসারে, ভাতা পাওয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নমিনিদের প্রতি বছর বার্থ সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়।

    পঞ্চায়েতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী সরেজমিনে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্লকে সেই শংসাপত্র পাঠান। সেই অনুযায়ী উপভোক্তাদের ভাতা বরাদ্দ হয়। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে ভাসানির পরিবর্তে মৃত হিসেবে রয়েছে ধীরেনের নাম। সে জন্য তাঁর বাধর্ক্যভাতা বন্ধ, নাম নেই ভোটার তালিকায়ও। শেষ পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি।

    প্রসঙ্গত, ২০২৪ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল। এমনকী, স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে বার্ধক্য ভাতার যে টাকা জমা হয়েছে, তা ধীরেনের কাজে আসেনি। ফিরে গিয়েছে সরকারি তহবিলেই। ভিক্ষা করে অন্ন জোটানো কঠিন। তাই চরম আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটছে তাঁর।

    ধীরেনের ভিক্ষার উপরে টিম টিম করে জ্বলছে সংসারের আলো। ধীরেন বললেন, ‘আমি বেঁচে থেকেও মৃত! সমস্ত সরকারি সহায়তা ও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। বার বার প্রশাসনকে জানিয়েও ভুল সংশোধন হয়নি। সরকারি সহায়তাটুকু পেলে নাতনিকে পড়াতে পারতাম। ভিক্ষা করে সবদিক সামলানো যায় না।’

    তৃণমূলের নারায়ণপুর অঞ্চল কমিটির সভাপতি মিলন শেখ বলেছেন, ‘মনে হয় ভুলবসত ওঁর নাম বাদ গিয়েছে। বিষয়টি জানার পরেই আমরাও ওই ভিক্ষুকের বাধর্ক্য ভাতা চালুর সঙ্গে ভোটার তালিকায় নাম তোলার চেষ্টা করছি।’

    পঞ্চায়েত প্রধান রামেশ্বর হাঁসদা জানিয়েছেন, তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার আগে ঘটনাটি ঘটেছে। ভুল সংশোধনের ব্যাপারে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন। বিডিও অঙ্কুর মিত্রের কথায়, ‘বিষয়টি শুনেছি। খতিয়ে দেখে তবেই বলতে পারব।’

  • Link to this news (এই সময়)