এই সময়, আসানসোল: ক্যাব চালক থেকে ক্যান্সারের নকল ওষুধ তৈরি ও পাচারের অন্যতম মূল পান্ডা! তিন বছরের মধ্যে এমনই ‘উত্থান’ হয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার কুমিরখোলার বাসিন্দা সাবির আলমের।
দেশের বিভিন্ন রাজ্য, এমনকী বাংলাদেশেও পৌঁছে গিয়েছিল মারণ রোগ ক্যান্সারের নকল ওষুধ। এর নেপথ্যে থাকা বছর একত্রিশের সাবিরকে প্রায় আড়াই বছর ধরে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তারি এড়াতে সে এতদিন বিভিন্ন জায়গায় গা-ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছিল। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ল অভিযুক্ত।
জামুড়িয়া থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ মে, মঙ্গলবার জামুড়িয়ার কেন্দা বাসস্ট্যান্ডের কাছ থেকে সাবিরকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। এখানে ইসিএলের আবাসনে তার দাদা-বৌদি থাকেন।
সেখানে কখনও কখনও সে আসত। দিল্লি পুলিশ এ বিষয়টি সূত্র মারফত জানতে পেরে, কেন্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার পরের দিন, ২১ মে ধৃতকে আসানসোল আদালতে হাজির করানো হয়।
ট্রানজ়িট রিমান্ডে তাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জামুড়িয়া থানায় সাবিরের নামে যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল সেটা দেখিয়ে গ্রেপ্তারি মেমো দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে ক্যান্সারের নকল ওষুধ তৈরি এবং তা পাচারের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০২২ সালের নভেম্বরে। তখনই এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয় বলে জানান দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (ক্রাইম) হর্স ইন্দোরা।
ঘটনায় দুই চিকিৎসক-সহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হরিয়ানার সোনিপতে ক্যান্সারের নকল ওষুধ তৈরির কারখানায় হানা দেয় পুলিশ। অভিযান চালানো হয় উত্তরপ্রদেশের টনিকা সিটির একটি গুদামেও।
সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ জাল ওষুধ উদ্ধার করে পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রে জড়িত সাবিরের নাম পায় পুলিশ। কিন্তু পুলিশ দীর্ঘদিন তার খোঁজ পায়নি। তাকে ধরতে বিশেষ দলও তৈরি করা হয়।
দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (ক্রাইম) জানিয়েছেন, এই সিন্ডিকেটে সাবির আলম এক অন্যতম মাথা হিসেবে কাজ করেছে। সিন্ডিকেটে সে–ই অন্যতম যোগাযোগকারী হিসেবেও কাজ করত। পুলিশের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আগে সাবির ক্যাব চালাত। ২০২২ সালে তার সঙ্গে এক ডাক্তারের পরিচয় হয়।
অভিযোগ, সেই ডাক্তারই তাকে নকল ওষুধ তৈরির কারবারে নিয়ে আসেন। সেই শুরু। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, অন্য রাজ্যে যেমন নকল ওষুধ সরবরাহ করত সাবির, তেমনই বাংলাদেশেও ক্যান্সারের এই নকল ওষুধ পাচার করত সে। এমনকী সরাসরি ক্যান্সার রোগীদের নকল ওষুধ দিয়ে টাকা নিত সে। তাই সাবিরের গ্রেপ্তারিকে বড় সাফল্য বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।