অশীন বিশ্বাস, রহড়া
‘খেপলির বিল’ নামটার সঙ্গে খড়দহ, পানিহাটি ছাড়াও আশপাশের এলাকার এমন কোনও মানুষ নেই যিনি পরিচিত নন। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে খড়দহ ও পানিহাটির সীমানাবর্তী বন্দিপুর পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যেই পড়ে ওই বিলের বেশিরভাগ অংশ।
প্রায় ১৯ একরের সুদীর্ঘ জলাশয় প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার পাশাপাশি এলাকার মৎস্যজীবীদেরও রোজগারের মাধ্যম। সেই জলাশয়েই এ বার নজর পড়েছে জমি হাঙরদের।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নজর এড়িয়ে সদরহাটের কাছে বিশাল জলাশয়ের একদিকের অংশে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে! স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফুঁসলেও ভয়ে মুখে কুলুপ তাঁদের৷ তবে কি ভরাটের পিছনে শাসকদলের কোনও স্থানীয় বা প্রভাবশালীর মদত রয়েছে? বিরোধীদের কটাক্ষ, শাসক নেতার অনুমতি রয়েছে বলেই ভরাট হচ্ছে। অবিলম্বে ভরাট বন্ধ করার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
কলকাতার সঙ্গে উত্তর শহরতলির দ্রুতগতির যোগাযোগের এখন অন্যতম মাধ্যম কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। ঝাঁ চকচকে এক্সপ্রেসওয়ের পাশেই খড়দহ ও পানিহাটির সীমানায় রয়েছে খেপলির বিল।
রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র খড়দহের বিধায়ক থাকার সময় বিরাট ওই জলাশয়কে ঘিরে ইকো ট্যুরিজম পার্ক করার পরিকল্পনা করেছিলেন। যদিও পরে তা হয়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে চওড়া হওয়ার পাশাপাশি এই রাস্তা দিয়ে যেমন গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে তেমনি বেড়েছে গাড়ির গতি। ফলে এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে নজর পড়েছে জমি হাঙরদের।
পুলিশ প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খেপলির বিলের অংশ! স্থানীয়দের অভিযোগ, কখনও রাতের অন্ধকারে আবার কখনও দিনের আলোতেই প্রকাশ্যে ডাম্পারে করে গাড়ি গাড়ি মাটি ফেলে সদরহাটির কাছে ভরাট করা হচ্ছে জলাশয়।
নির্দিষ্ট ভাবে জমি চিহ্নিত করে একদিকে আবার দেওয়ালও তুলে দেওয়া হয়েছে। সবটাই পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, গোটা বিষয়টির পিছনে রয়েছে একটা চক্র। যাদের মাথায় হাত রয়েছে কোনও প্রভাবশালীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘কোনও বাড়ির কাজ করতে গেলেও খবর চলে যায় শাসক ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেট বাহিনীর হাতে। আর এক্সপ্রেসওয়ের ধারের জলাশয় ভরাট হচ্ছে, পুলিশ প্রশাসন কিছু জানে না এটা হয় নাকি!’ বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যদি এ ভাবে ভরাট হতে থাকে তা হলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা খেপলির বিলটাই হয়তো আর থাকবে না।
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য শুভব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘বিশাল এই জলাশয় বাস্তুতন্ত্র এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। শাসক দলের মদতে এক শ্রেণির অসাধু লোক নিজেদের পকেট ভরাতে বেআইনি কাজ করছে। আমরা অবিলম্বে ভরাট বন্ধের জন্য জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।’
বিজেপি নেতা জয় সাহা বলেন, ‘তৃণমূলের মদতেই ভরাট হচ্ছে। প্রশাসনিক স্তরে জানাব। কাজ না হলে রাজ্যপালকে জানাব।’
এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যারাকপুর–২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর রাজবংশী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে কোথাও জলাভূমি বুজিয়ে কিছু করা যাবে না। যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে খতিয়ে দেখে আইনানুগ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হবে।’
স্থানীয় খড়দহের বিধায়ক তথা মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জলাভূমি ভরাট নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘শুধু খেপলির বিল নয়, পাশের আরও দু’টি জলাশয়ের অংশ ভরাট হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসককে আমি কড়া চিঠি লিখছি। যাতে অবিলম্বে ভরাট বন্ধ হয় এবং জলাশয়গুলিকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া যায়।’