দিব্যেন্দু সরকার, আরামবাগ
কৃষক বিক্ষোভের জেরে গ্রামীণ রাস্তা তৈরি কাজ বন্ধ হয়ে গেল। কৃষকদের দাবিকে মান্যতা না দিয়ে, জোর করে কাজ করার অভিযোগ উঠল স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
রবিবার সকালে ঠিকাদাররা বহিরাগত লোকজন নিয়ে গিয়ে কৃষকদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ শুরু করে। এর পরেই কৃষকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ঘটনাটি ঘটেছে আরামবাগ ব্লকের মাধবপুর অঞ্চলের কানপুর এলাকায়।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার রাস্তা তৈরির কাজ চলছিল হুগলি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘদিন আগেই কানপুর এলাকার কৃষকরা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি থেকে মাটি তোলার বিষয়ে আপত্তি তোলেন।
প্রায় ১৫০ জনের মতো কৃষক এই আপত্তি তোলেন। তাঁদের দাবি, এই রাস্তা তৈরি করতে হলে, কৃষকদের অনুমতি নিতে হবে। রাস্তার জন্য জমি কৃষকরা দিতে রাজি। কিন্তু জমি থেকে মাটি তুলে রাস্তা করা চলবে না।
কারণ, জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তা করলে, জমিতে গর্ত হয়ে যাবে, জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাবে। ফসল হবে না, বা হলেও, সেই ফসলের মান অত্যন্ত নিম্ন মানের হবে। তাঁদের দাবি, বাইরে থেকে মাটি এনে রাস্তা তৈরি করা হোক। প্রয়োজনে গ্রামের কৃষকরা পুকুর থেকে মাটি দিতে রাজি।
কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও তৃণমূল নেতাদের ঠিক করা ঠিকাদার বাইরে থেকে লোকজন এনে, জোর করে জমি থেকে মাটি তুলে রাস্তা তৈরি শুরু করে। এ দিন তাই কৃষকরা আপত্তি তোলেন এবং বিক্ষোভ দেখান। আর তাতেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এই বিষয়ে কানপুরের কৃষক জয়দেব ঘোষ, সাগর মাল, কাজল মাল-সহ একাধিক জনের বক্তব্য, ‘আমাদের রাস্তা তৈরিতে কোনও আপত্তি নেই। জমি আমরা দেব। কিন্তু রাস্তা তৈরির জন্য জমি থেকে মাটি নেওয়া চলবে না। বাইরে থেকে মাটি এনে রাস্তা তৈরি করতে হবে। জমির মাটি নিলে চাষ করা যাবে না। প্রয়োজনে গ্রামের পুকুর থেকে মাটি নিয়ে এসে রাস্তা তৈরি করা হোক।’
প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে, ডিহিবাগনান থেকে বলরামপুর পর্যন্ত বেশ কয়েক কিলোমিটার ধরে রাস্তাটি হচ্ছিল। মাঝে একমাত্র কানপুর এলাকায় রাস্তা নিয়ে জট তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বিজন বেসরা বলেন, ‘ওখানে রাস্তা তৈরি নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। আমরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করব।’
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান খাদেমুল ওয়াহাব বলেন, ‘কৃষকরা আপত্তি তুলেছিলেন বলে অনেক দিন কাজ বন্ধ ছিল। এ দিন আবার কাজ শুরু করতে গেলে সেই একই বাধা আসে। কিন্তু গণ্ডগোল না করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিডিও অফিসে কৃষকদের নিয়ে আলোচনা হবে। রাস্তা তৈরির মাটি নিয়ে সমস্যা আছে। সাধারণত, রাস্তা তৈরির জন্য যে জমির উপর দিয়ে রাস্তা যাচ্ছে, সেখান থেকেই মাটি নেওয়া হয়। কিন্তু কৃষকরা সেটা মানতে চাইছেন না।’ গ্রামের মানুষজন অবশ্য জানিয়েছেন,যাতে সুষ্ঠু ভাবে রাস্তার কাজ হয়, সেটা দেখতে হবে প্রশাসন ও স্থানীয় পঞ্চায়েতকে।